রোহিঙ্গাদের প্রথম দল ভাসানচর যাচ্ছে শুক্রবার

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য নির্মিত ঘর।সব আলোচনা-সমালোচনা ও জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রথম দল স্বেচ্ছায় শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) ভাসানচরে যাচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রথম ধাপে ৫০০ রোহিঙ্গা পরিবারকে সেখানে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যা পরবর্তীতে আরও  বৃদ্ধি পেতে পারে।

বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

জানা গেছে, ভাসানচরে মোট এক লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ঘর তৈরি করা হয়েছে। যেসব রোহিঙ্গা সেখানে যাবে, তাদের জন্য আগামী তিন মাসের খাদ্য মজুত আছে। এছাড়া পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।  চরে হাঁস-মুরগি পালন ও সবজি চাষেরও সুযোগ থাকবে রোহিঙ্গাদের জন্য।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে প্রথম জাহাজ শুক্রবার সকালে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দেবে।’

প্রসঙ্গত, করোনা মহামারির সময়ে সমুদ্র থেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে আগেই ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছিল। তবে তাদের কক্সবাজারে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গাদের দেখভালের জন্য ২২টি স্থানীয় ও বিদেশি এনজিও আগ্রহ প্রকাশ করায় তাদের ভাসানচরে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে সরকার।

ভাসানচর প্রকল্প

ভাসানচর বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা ছোট একটি দ্বীপ। কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গাকে সেখানে স্থানান্তরের জন্য ২০১৭ সালে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। যা পরবর্তীতে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৪ কোটি টাকায়।

ভাসানচরে নির্মিত প্রতিটি বাড়িতে ১৬টি করে রোহিঙ্গা পরিবার থাকতে পারবে। প্রতি গুচ্ছতে ১২টি করে বাড়ি রয়েছে। এরকম ১০০টিরও বেশি গুচ্ছের প্রতিটিতে শিশুদের জন্য খেলা ও পুকুরের ব্যবস্থা আছে।

এছাড়া সেখানে বর্ষার পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা, সৌর চালিত পাম্পের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা, মাল্টিপারপাস সাইক্লোন শেল্টার, সৌর বিদ্যুৎ, অন্যান্য সরকারি অফিস রয়েছে ।

চ্যালেঞ্জ

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে সরকারের, যা একটি বড় বোঝা হতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সেখানে ৩০৬ জন রোহিঙ্গার জন্য প্রতি তিন মাসে খরচ হয় প্রায় তিন কোটি টাকা। ভাসানচরে রোহিঙ্গার সংখ্যা বাড়লে অর্থ ব্যয়ের পরিমাণ আরও বাড়বে। 

রোহিঙ্গাদের নিয়ে সেখানে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে তিনি বলেন, এর ফলে কক্সবাজারের ওপরে চাপ কিছুটা কমবে এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও ভালো হবে।

এছাড়া কক্সবাজারে ভূমি ধসের আশঙ্কা রয়েছে। রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিলে সেই ভয়টাও কিছুটা কমে আসবে বলে তিনি জানান।