দেশ গঠনে শ্রমিকদের কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দিলেন বঙ্গবন্ধু

4

 

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ১২ ডিসেম্বরের  ঘটনা।)

মিল ও কলকারখানার উৎপাদন এবং বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার উদ্দেশ্যে গভীরতার সঙ্গে লক্ষ্য অর্জনের অঙ্গীকার নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতে দেশের মেহনতি শ্রমিককে আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২ সালের এই দিনে (১২ ডিসেম্বর) গণভবনে শ্রমিকদের এক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় বঙ্গবন্ধু এ আহ্বান জানান।

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমাদের শিল্প-কারখানায়, মিলগুলোতে উৎপাদন বাড়াতে হবে। শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে হবে। মিল-কলকারখানার উৎপাদন না বাড়ানো গেলে জনগণের কাছে স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে না। সময়মতো জনগণের কাছে স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে দিতে এর কোনও বিকল্প নেই।’ জনগণের প্রতি মেহনতি শ্রমিকদের যে দায়িত্ব রয়েছে, সে দায়িত্ববোধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সব  কারখানায় উৎপাদন বাড়িয়ে তুলতে সবাইকে সচেতনভাবে কাজ করে যেতে হবে।  সরকার দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু দেশের প্রতিটি কৃষক-শ্রমিক সব স্তরের, সব শ্রেণির মানুষ যদি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কর্মঠ না হয়, সক্রিয়ভাবে কাজে অংশগ্রহণ না করে, সর্বাত্মকভাবে যদি কর্মদক্ষতার পরিচয় না দেয়, তাহলে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশ সরকার দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যে অঙ্গীকার করেছে— তা দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে।’

১৯৭২ সালের ১৩ ডিসেম্বর পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিপ্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক জীবনে দেশের মেহনতি শ্রমিক শ্রেণির সঙ্গে তিনি অত্যন্ত নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন। সব সময় তার সাধ্য অনুযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান করতে চেষ্টা করেছেন।’ শ্রমিক প্রতিনিধিদের তিনি বলেন, ‘তাদের সমস্যা আলোচনা করতে এবং সাধ্যমতো তা সমাধানের চেষ্টা করতে তিনি তৎপর।’ প্রধানমন্ত্রী শ্রমিক সমাজকে তার সরকারের প্রতি আস্থা রেখে কাজ করার আহ্বান জানান।

১৯৭২ সালের ১৩ ডিসেম্বরের পত্রিকা

 

সাংবাদিকদের মুখোমুখি তাজউদ্দিন

অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতিকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’ স্বাধীনতার বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তাজউদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমিতে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘সমাজতন্ত্র কায়েমের জন্য সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার সাহায্য নিতে হবে। সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়ার সহযোগিতায় কখনও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।’

 

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সংবিধান সমাজতন্ত্রের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য বাধার কারণ হয়নি, বরং অগ্রসর হতে বেশকিছু দিক নির্দেশনার পথ খুলে দিয়েছে। উনিশ শতকের ধারণা নিয়ে আজকের দিনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না। গণতন্ত্রের জন্য অবশ্যই সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসের সহযোগিতা থাকতে হবে।’ স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেওয়া যুবশক্তির অবদান স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের পরবর্তী সময়ে এই যুবশক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারিনি বলেই তারা বিপথগামী হয়েছে। তাদের মধ্যে অর্থ-সম্পত্তি উপার্জনের আকাঙ্ক্ষা নয়, বরং অন্যদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে, যা জাতির জন্য ক্ষতিকর।’

খাদ্যের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের  আবেদন

জাতিসংঘের মহাসচিব কুট ওয়াল্ডহেইম বাংলাদেশের খাদ্যঘাটতি ঘোঁচাতে আরও এক লাখ টন খাদ্যশস্য সরবরাহ পেতে বিশ্ববাসীর প্রতি আবেদন নিয়ে হাজির হবেন বলে জানানো হয়। বাংলাদেশে জাতিসংঘের ত্রাণ সরবরাহের প্রধান মি. ভিক্টর খাদ্যমন্ত্রী ফনিভূষণ মজুমদারের সঙ্গে এক বৈঠকে এ তথ্য দেন।

1

 

শিল্পীদের ভূমিকা নিয়ে ড. কামাল হোসেন

স্বাধীনতা সংগ্রামে বুদ্ধিজীবী ও সাহিত্যিকদের মতো কারু ও চারুশিল্পীদের অবদান অপরিসীম। স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত এক চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে শিল্পীদেরও সহযোগিতা করতে হবে।’ তাদের প্রতিভার স্ফুরণ ঘটনোর জন্য একটি উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।