কারুকাজ করা হাতে লেখা সংবিধান বঙ্গবন্ধুর হাতে

2(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বরের ঘটনা।)

১৯৭২ সালের ১৪ ডিসেম্বর গণপরিষদ সদস্যদের সংবিধানে স্বাক্ষর দেওয়ার কথা। সেই উপলক্ষ সামনে রেখে ১৯৭২ সালের ১৩ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কারুকার্য শোভিত সংবিধানের মূল কপি দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু সেটির প্রশংসা করেন। এই মূলকপি শিল্পীর বাংলায় হাতে লেখা এবং সেটিকে জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত রাখার কথা এনার খবরে বলা হয়। আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন গণভবনে প্রধানমন্ত্রীকে সেটি দেখান। এসময় যার সামগ্রিক তত্ত্বাবধানে এই ঐতিহাসিক দলিল তৈরি হয়েছে সেই শিল্পী জয়নুল আবেদীন সেখানে উপস্থিত ছিলেন।  তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন কারুকাজের ব্যাখ্যা দেন।

1

শ্রমিকসভায় আইনমন্ত্রীকে সংবিধান অর্পণ

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কামাল হোসেনের কাছে প্রকাশিত সংবিধান অর্পণ উপলক্ষে দুপুরে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয় ওয়ার্কমেন্স ইউনিয়নের সভাপতি কে এম বি হুসেন এতে সভাপতিত্ব করেন। প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ড. কামাল হোসেন। মন্ত্রণালয়ের প্রধান কর্মকর্তারা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং দেশের সামগ্রিক পুনর্গঠনে কর্মচারীদের পবিত্র দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। এরপর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনের হাতে সংবিধানের দুটো কপি উপহার দেওয়া হয়। প্রধান অতিথির ভাষণে কামাল হোসেন সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্ব ও অধিকারের ওপর আলোকপাত করেন। তিনি কর্মচারীদের জন্য সবকিছু করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। এই সমাবেশে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বিচারপতি মোমেনসহ প্রায় দেড় সহস্রাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। সবার শেষে ইউনিয়নের কার্যালয়ে তাদের আপ্যায়ন করা হয়।

3

কাল সাক্ষর

১৪ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় গণপরিষদ মন্ত্রীর বৈঠক শুরু হওয়ার কথা। বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান পাশ হওয়ার পর ৪ নভেম্বর গণপরিষদের অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছিল। গণপরিষদের অধিবেশন শুরু হলে সদস্যরা সাড়ে সাত কোটি মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে ভিত্তি করে রচিত সংবিধানে স্বাক্ষর দান করবেন। পরিষদে সংবিধানের মূল বাংলা কপি ও তার প্রামাণ্য ইংরেজি অনুবাদ এই দুই কপি সদস্যরা স্বাক্ষর করবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম স্বাক্ষর দেবেন। তারপর জ্যেষ্ঠতা অনুসারে মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যরা এবং পরে পরিষদের আসন বণ্টনের ক্রমিক অনুসারে অন্যান্য সদস্যরা স্বাক্ষর করবেন।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের নেতৃত্বে শিল্পীরা সংবিধানের হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি তৈরি করেন। এই পাণ্ডুলিপিতে জাতীয় ফুল শাপলার মনোগ্রাম দেখা যায়। এই পাণ্ডুলিপি জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত হবে এবং সংবিধানে স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী ও পরিষদের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেবেন বলেও জানানো হয়।

দিল্লিতে যৌথ কমিশনের বৈঠক সমাপ্ত

বাংলাদেশ ভারত যৌথ নদী কমিশন উভয় দেশের প্রধান নদী অববাহিকা উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। কমিশনের তৃতীয় বৈঠক শেষে প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় কমিশন পর্যায়ক্রমে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য কাঠামো বিবেচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশন উভয় দেশের প্রধান নদীগুলোর অববাহিকা উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা সম্বন্ধে আলোচনাও করেছে। কমিশন বাংলাদেশ সরকারকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন পরিকল্পনা সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহের অনুরোধ জানিয়েছে। ১৯৭৩ সালের মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকায় আবার কমিশনের বৈঠক বসবে। কমিশনের চেয়ারম্যান ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বি এম আব্বাস বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। ঢাকা ও দিল্লি থেকে একই সঙ্গে প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পারস্পরিক স্বার্থে ফারাক্কা থেকে গড়াই নদী পর্যন্ত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ জরিপ কর্মসূচি গ্রহণের জন্য কমিশন সুপারিশ করেছে।

4