পরিষদ বিলুপ্ত করে ইতিহাস সৃষ্টি হলো: বঙ্গবন্ধু

2(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বরের ঘটনা।)
গণপরিষদের সমাপনী অধিবেশনে ১৯৭২ সালের ১৫ ডিসেম্বর সংবিধানের পরিষদ সদস্যদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। রাত ১২টার পর শাসনতান্ত্রিক বিধান অনুসারে গণপরিষদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং নয়া সংবিধান চালু হয়েছে বলে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়।
১৫ ডিসেম্বর সকাল দশটায় গণপরিষদের মুলতবি বৈঠক শুরু হয়। সভাপতিত্ব করেন স্পিকার মাহমুদ উল্লাহ। ১৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার থেকে সংবিধানে দস্তখত দেওয়া শুরু হয়। ১৫ ডিসেম্বরের সমাপ্তি অধিবেশনে ৮ জন সদস্য ছাড়া বাদবাকি সকল সদস্যের দস্তখত দেওয়া শেষ হয়।

স্পিকার মাহমুদ উল্লাহ অধিবেশন শেষে তার কক্ষে সংবিধানে স্বাক্ষর করেন। মন্ত্রী মোল্লা জালাল উদ্দিন অসুস্থতার কারণে পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে পারেননি বলে পরিষদের সচিব হাসপাতালে গিয়ে সংবিধানে স্বাক্ষরের ব্যবস্থা নেন। মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ, জালাল আহমদসহ কয়েকজন না থাকায় সংবিধানে তাদের স্বাক্ষর দিতে পারেননি। এছাড়া ন্যাপ দলীয় সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও নির্দলীয় সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা, আওয়ামী লীগ সদস্য আজিজুর রহমান এবং মোহাম্মদ ইব্রাহিম অনুপস্থিত থাকার জন্য সংবিধানে স্বাক্ষর দিতে পারেননি। তবে পরবর্তীতে তারা যেন সংবিধানে সই করতে পারেন সেই বিধান রাখা হয়েছে। স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষ হলে পরিষদের নেতা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সমাপনী সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন, জাতিকে একটি সংবিধান দিয়ে পরিষদের সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। সংবিধান দিয়ে পরিষদ সদস্যরা নিজেরাই পরিষদ বিলুপ্ত করে দিয়ে আর একটা ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, রাত বারোটার পর আমরা আর গণপরিষদের সদস্য থাকবো না। আমরা যে সংবিধান তৈরি করেছি রাত ১২টা এক মিনিট থেকে তা চালু হবে।

3

স্পিকার মাহমুদ উল্লাহকে পরিষদের বিলুপ্তি ঘোষণা করতে আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, আমরা গণপরিষদের সদস্য ঘোষণা করছি যে মধ্যরাতে থেকে আর গণপরিষদ সদস্য থাকবো না। বঙ্গবন্ধু পরিষদ সদস্য সরকারি কর্মচারী, পরিষদ কর্মচারী ও পরিষদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। বঙ্গবন্ধু বলেন, মার্চ মাসে নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়ে আসবেন তারা আবার পরিষদে বসবেন এবং জনগণের জন্য আইন তৈরি করবেন। ‘খোদা হাফেজ’ ও ‘জয় বাংলা’ বলে ভাষণ শেষ করেন তিনি। পরিষদের নেতার বক্তৃতা শেষ হলে স্পিকার মাহমুদ উল্লাহ বলেন, আজ আনন্দ ও দুঃখের দিন। আনন্দের এ জন্য যে পরিষদ দেশকে এটি সংবিধান দিতে পেরেছে। আর দুঃখ এ জন্য যে পরিষদের সদস্যরা আজ বিদায় নিচ্ছেন। কে আবার পরিষদে আসতে পারবেন সে কথা কেউ বলতে পারেন না। তিনি ঘোষণা করেন রাত বারোটার পর থেকে গণপরিষদ বিলুপ্ত হবে এবং সংবিধান কার্যকর হবে।

রবিবার মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ

১৫ ডিসেম্বর শুক্রবার মধ্যরাত থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার সংবিধান চালু হয়। সংবিধান চালু হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭২ সালের ১৭ ডিসেম্বর রবিবার সকাল সাড়ে দশটায় বঙ্গভবনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথগ্রহণের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়। প্রথমে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে শপথ গ্রহণ করাবেন। তারপর প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রপতি শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন। সর্বশেষে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী বর্তমান রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিসভার আগামী সাধারণ নির্বাচনে উত্তরাধিকারীরা ক্ষমতাসীন হওয়া পর্যন্ত নিজ নিজ পদে বহাল থাকবেন।

1

প্রথম বিজয় দিবসের প্রস্তুতি সম্পন্ন

১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে যে রক্তবীজ বপন হয়েছিল তারই রক্তাক্ত ফলশ্রুতিতে পাওয়া স্বাধীনতার এক বছর অতিক্রান্ত না হতেই বঙ্গবন্ধুর গতিশীল নেতৃত্বে পরিচালিত গণপরিষদ জাতিকে দিয়েছিল একটি সংবিধান, যার মাধ্যমে সাংবিধানিক পরিসরে জাতির পথ চলার নির্দেশনা ছিল।

জাতীয়তাবাদ সমাজতন্ত্র গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাসহ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ওপর ভিত্তি করে রচিত সংবিধান হাতে নিয়ে সে বছর বিজয় উৎসব উদযাপিত হয়। বঙ্গবন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় দিবসের ভাষণ দেবেন। সেটিই ছিল উদযাপনের প্রধান অনুষ্ঠান।