এবার সংবিধানের আলোকে শপথ

1

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বরের ঘটনা।)
১৯৭২ সালের ১৭ ডিসেম্বর বঙ্গভবনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ও তার মন্ত্রিসভার একশ সদস্যের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য মোল্লা জালাল উদ্দিন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় বঙ্গভবনে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি। পরে হাসপাতালে রাষ্ট্রপতি তার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর হয়েছে। সেই সংবিধান অনুযায়ী নতুন শপথ নেওয়া মন্ত্রিসভা আগামী নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত শাসনকার্য পরিচালনা করে যাবে।
১৭ ডিসেম্বর সকাল ১০টা ২০ মিনিটে মিনিটে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দরবার হলে প্রবেশ করলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা করতালি দিয়ে তাদের স্বাগত জানান। সাড়ে দশটায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ সায়েম রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রধান বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর শপথ পরিচালনা করেন। পরে আবু সাঈদ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শপথ পরিচালনা করেন।

2

গ্রামের পথে রক্ষীবাহিনী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি, ডাকাত ও অন্যান্য সমাজবিরোধী ব্যক্তিদের নির্মূলের জন্য রক্ষীবাহিনী ১৯৭২ সালের এইদিন রাত থেকে দেশের বিভিন্ন পল্লী এলাকায় যেতে শুরু করে। উল্লেখ্য, ১৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন যে দুর্নীতি ও ডাকাতিতে লিপ্ত ব্যক্তিদের শায়েস্তা করার জন্য এই মাসেই বিভিন্ন এলাকায় রক্ষীবাহিনী পাঠানো হবে। তিনি আরও বলেন, প্রয়োজন হলে এই কাজ এগিয়ে নিতে সেনাবাহিনীও নিয়োজিত করা হতে পারে।

দেশের অর্থনীতি ধ্বংস থেকে রেহাই পাওয়ার ব্যাপারে সরকারের কার্যক্রমে সহযোগিতা করার জন্য তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। রক্ষীবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেন, কালোবাজারি ও অন্যান্য সমাজবিরোধী খুঁজে বের করার জন্য জনসাধারণের সাহায্য ও সহযোগিতার প্রয়োজন হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জনগণ তাদের সহযোগিতা করবে এবং সম্মিলিত প্রয়াসে সমাজবিরোধীদের উৎখাত করতে সক্ষম হবে।

আগামীকাল সুপ্রিম কোর্টের উদ্বোধন

বঙ্গবন্ধু ১৮ ডিসেম্বর বিকাল তিনটায় বাংলাদেশ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের উদ্বোধন করবেন বলে জানানো হয়। বিপিআই জানায়, এর আগে সকাল দশটায় রাষ্ট্রপ্রধান বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সুপ্রিম কোর্টে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন। দেশে নতুন শাসনতন্ত্র কার্যকর হওয়ার ফলে সুপ্রিম কোর্ট সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।

এদিকে শপথ নেওয়ার পরেই এই দিনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার প্রায় দুই ঘণ্টা স্থায়ী এক বৈঠক হয়। সকালে সংবিধানের অধীনে শপথগ্রহণের পর এটিই প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠক।

তথ্যমন্ত্রী সোনার বাংলা গড়তে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেন

তথ্য ও বেতার মন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরী সত্যিকারের সোনার বাংলা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে দায়িত্বশীলতা ও একাগ্রতা বোধ উদ্বুদ্ধ করে তোলার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বাংলাদেশ পরিষদ মিলনায়তনে জাতীয় সংসদের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের ভাষণ দিচ্ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান সিরাজুল ইসলাম। তথ্যমন্ত্রী অতীতে জনগণকে জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করার ব্যাপারে সাংবাদিকদের কার্যকর ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।

এদিকে অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ বিজয় উদযাপন অনুষ্ঠানে বলেন, সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে স্বাধীনতার ইতিহাস লিখতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও উপকরণ সংগ্রহ করে ইতিহাস রচনার আহ্বান জানান তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, মিথ্যা ও কল্পনার রঙে রঞ্জিত করে ইতিহাস যদি রচনা করা হয় তবে তা আগামীতে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হবে।