প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জোর দিয়ে বলেছেন, দেশে তরুণদের পেশাগত প্রশিক্ষণ দেওয়া খুবই জরুরি। ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুর টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপকালে বঙ্গবন্ধু এসব কথা বলেন। কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে এই প্রতিবেদনটি দৈনিক বাংলা পত্রিকায় ২২ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয়। এনার খবরে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশের উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত লোকের দরকার রয়েছে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষাদানের পদ্ধতি বদলাতে হবে। উপনিবেশবাদী ব্যবস্থায় শিক্ষাপ্রাপ্ত লোক দিয়ে এখন আর কাজ হবে না।’
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে পুনর্গঠনের কাজ করতে হচ্ছে।’ তিনি জানান, পেশাগত ট্রেনিংপ্রাপ্ত তরুণদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। বাংলা ভাষা আমাদের জাতীয় ভাষায় পরিণত হয়েছে বলে বিপুলসংখ্যক বাংলা স্টেনোগ্রাফার ও টাইপিস্ট নিয়োগ দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, ইতোমধ্যে পাঁচ হাজার বাংলা টাইপরাইটার আমদানি করা হয়েছে। এসব টাইপরাইটার বিভিন্ন পেশাগত কারিগরি ট্রেনিং সেন্টারে বিতরণ করা হবে।’ শিক্ষকদের সমস্যার কথা জানেন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট দফতর কাজ করছে।’
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা দফতরের মন্ত্রী আব্দুল মালেক উকিল ঘোষণা করেন যে, বাংলাদেশ সরকার দেশে সুষ্ঠু পরিকল্পিত পরিবার গঠনের জন্য গর্ভপাত বৈধকরণ নীতিগতভাবে গ্রহণ ও বিবাহের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর নির্ধারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ১৯৭২ সালের এই দিনে (২১ ডিসেম্বর) ঢাকার একটি হোটেলে আন্তর্জাতিক কার্যক্রমে যুক্ত প্রতিনিধিদলের দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে মালেক উকিল এ কথা ঘোষণা করেন বলে বিপিআই’র খবরে উল্লেখ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২২ ডিসেম্বর বিকাল তিনটায় মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিফলকের আবরণ উন্মোচন করবেন বলে আগাম প্রতিবেদনে জানানো হয়। বাসসের খবরে বলা হয়, স্মৃতিফলকের আবরণ উন্মোচন উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্মৃতিফলকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
রাজনৈতিক মুক্তির চাইতে মননের মুক্তি বুদ্ধির মুক্তি অনেক মূল্যবান। এটা ছাড়া স্বাধীনতা অর্থপূর্ণ হতে পারে না। লোকের স্বাধীনতা হরণ করা মানে একটা জাতিকে অপরিণত বুদ্ধি ও নাবালক করে রাখা। এর মাধ্যমে একটি দাস জাতি করা যায়, কিন্তু মহৎ জাতি করা সম্ভব না। ১৯৭২ সালের ২১ ডিসেম্বর বিকালে বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক গ্রন্থমেলার দ্বিতীয় দিনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
কাউনিয়া-বোনারপাড়া লাইনে পীরগাছা চৌধুরানী বাসনভাঙা রেল স্টেশনে হাজার হাজার মণ আখ শুকিয়ে যাচ্ছে বলে প্রধান খবর হিসেবে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক বাংলা। প্রতিবেদন অনুসারে, ১৯৭২ সালের ৪ ডিসেম্বর রংপুর সুগার মিলের জন্য এসব আখ কেনা হয়। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এগুলো যথাস্থানে পাঠানোর কোনও ব্যবস্থা করতে পারেনি। ফলে একদিকে যেমন চাষিরা দুর্ভোগের সম্মুখীন, অপরদিকে মিলের ক্ষতি হচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়। উল্লেখযোগ্য যে, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে প্রতিকারমূলক কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।