বাড়তি উৎপাদনের জন্য বাড়তি মজুরি

 

দৈনিক বাংলা, ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭২ (বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বরের  ঘটনা।)

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পর থেকেই শ্রমিকের উৎপাদন বাড়ানোর প্রতি জোর দিয়ে আসছিলেন। সারা দেশে ঘুরে শ্রমিকদের উদ্দেশে বারবারই বলেছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে শ্রমিককে-কৃষককে উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে সতর্ক করে দেন তিনি।

সেই ধারাবাহিকতায় করপোরেশন ও শ্রমিক ফেডারেশনের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিতে শ্রমিক প্রতিনিধিরা উৎপাদনের একটি সর্বনিম্ন পরিমাণ সম্পর্কে নিশ্চয়তা প্রদান করেন। এই নিশ্চয়তা অনুযায়ী, শ্রমিককে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কোনও শ্রমিক এই দক্ষতা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হলে, তার মজুরি থেকে উপযুক্ত পরিমাণ অর্থ কেটে নেওয়া হবে। অপরদিকে কেউ সর্বনিম্ন পরিমাণের থেকে বেশি উৎপাদনে সক্ষম হলে, তার মজুরি বাড়িয়ে তাকে পুরস্কৃত করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭২ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ চটকল শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী, চটকল শ্রমিকরা পহেলা অক্টোবর থেকে নতুন হারে মজুরি পাবেন। ১৯৭৩ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদের নতুন মজুরি যে পরিমাণ টাকা পাওনা হবে, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে তিন কিস্তিতে তা পরিশোধ করা হবে বলে জুট মিলস করপোরেশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

বাংলাদেশ অবজারভার, ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭২খাদ্যে স্বনির্ভরতায় মহাপরিকল্পনা

খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জনে মহাপরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছিল বলে কৃষিমন্ত্রী শেখ আব্দুল আজিজ জানান। তিনি বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত না বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও কৃষি পদ্ধতির আধুনিকীকরণ সম্ভব হবে, ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব হবে না। তবে প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনায় যাতে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব হয়, সেদিকে লক্ষ রেখে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।’

১৯৭২ সালের এই দিনে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী গত এক বছরের কৃষি ক্ষেত্রে সাফল্য ও ব্যর্থতার মূল্যায়ন করতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে হানাদার বাহিনী শত শত কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস করেছে। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে জনগণ ও সরকার কৃষি ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এগিয়ে আসে।’

দৈনিক ইত্তেফাক, ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭২শিক্ষাব্যবস্থা গুরুতর আঘাতের সম্মুখীন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোজাফফর আহমদ চৌধুরী পরীক্ষা চলাকালে একশ্রেণির ছাত্রের অসদুপায় অবলম্বন বন্ধের ব্যাপারে এগিয়ে আসার জন্য দেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আকুল আবেদন জানান।

ড. চৌধুরী তার বিবৃতিতে বলেন, ‘পরীক্ষায় একশ্রেণির ছাত্রের অসদুপায় অবলম্বন ও অসহযোগ আন্দোলনে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এক গুরুতর আঘাতের সম্মুখীন হচ্ছে। এই আঘাত প্রকৃতপক্ষে আমাদের সেই প্রিয় মাতৃভূমির ভিত্তিমূলে এসে পড়েছে, যে মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য দেশের ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে।’ উপাচার্য বলেন, ‘আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে এই উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে না পারলে বাংলাদেশকে গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।’

দৈনিক বাংলা, ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭২বঙ্গবন্ধু যশোর যাচ্ছেন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২৫ ডিসেম্বর যশোরে যাবেন বলে সেখানে তাকে সংবর্ধনা দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে আগাম প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ মুক্ত হওয়ার পর যশোরে এটাই হবে বঙ্গবন্ধুর প্রথম সরকারি সফর। এই সংবর্ধনা উপলক্ষে শতাধিক সদস্যের একটি শক্তিশালী অভ্যর্থনা কমিটি গঠন করা হয়। এদিকে জাতির পিতাকে বিপুল সংবর্ধনা দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে বলে জানানো হয়।