প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাতে বলেছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দখলদার বাহিনী যে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, দেশ তা থেকে দ্রুত উদ্ধার লাভ করে দৃঢ়ভাবে অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধন করছে। এনা পরিবেশিত এক খবরের বরাত দিয়ে সংবাদপত্র প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী এদিন রাতে গণভবনে অক্সফাম প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করার সময় এসব কথা বলেন। অক্সফাম একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘যারা হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধ করেছে, প্রকাশ্য আদালতে তাদের বিচার করা হচ্ছে এবং হবে। যারা অপরাধী সাব্যস্ত হবে, তাদের শাস্তি দেওয়া হবে।’
জাতীয় পুনর্গঠন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁর সরকার কৃষি খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে।’ দেশের দীর্ঘস্থায়ী খাদ্য সংকটের কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সরকারি প্রচেষ্টার লক্ষ্য হলো সম্ভাব্য সর্বাধিক কম সময়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা।’ এ প্রসঙ্গে তিনি ৩৫ হাজার পাওয়ার পাম্প আমদানির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এসব পাওয়ার পাম্পের মাধ্যমে দেশে শীত মৌসুমের ফসল উৎপাদন বাড়ানো হবে। একই লক্ষ্যে আরও নানারকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’
পরিবার-পরিকল্পনার ডাক
এ পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু আশঙ্কাজনকভাবে জনসংখ্যা যে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা বন্ধ করার আহ্বান জানান এবং পরিবার পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘পরিবার-পরিকল্পনাকে জনপ্রিয় করার জন্য নারীদের যথাযথ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। সংবিধানে দেশের নারীদের সমান সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের সেবা করার চেতনায় যারা উদ্বুদ্ধ, তাদের স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের জন্য স্বাগত জানানো হচ্ছে। আমাদের জাতি গঠনমূলক কাজে সাহায্য করার জন্য তাদের স্বাগত জানাই।’
রেডক্রস ১৫ হাজার বাঙালির তালিকা করেছে
আন্তর্জাতিক রেডক্রস বাংলাদেশিদের প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করার জন্য ১০ হাজার বাঙালি নারী, শিশু ও ৫ হাজার কর্মহীন লোকের একটি তালিকা তৈরি করে। এদিন করাচিতে এই তালিকার বিষয়ে খবর পরিবেশিত হয়। পাকিস্তান সরকার দুই মাস আগে ঘোষণা দিয়েছিল যে অদূর ভবিষ্যতে এসব বাঙালির দেশে প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। করাচি থেকে চট্টগ্রামের পথে এসব বাঙালি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করবে বলে সুনির্দিষ্টভাবে এ দিনের সংবাদে প্রচারিত হয়।