অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বঙ্গবন্ধু

দৈনিক ইত্তেফাক, ৩০ ডিসেম্বর ১৯৭২ (বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বরের  ঘটনা।)

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাতে বলেছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দখলদার বাহিনী যে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, দেশ তা থেকে দ্রুত উদ্ধার লাভ করে দৃঢ়ভাবে অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধন করছে। এনা পরিবেশিত এক খবরের বরাত দিয়ে সংবাদপত্র প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী এদিন রাতে গণভবনে অক্সফাম প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করার সময় এসব কথা বলেন। অক্সফাম একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

বাংলাদেশ অবজারভার, ৩০ ডিসেম্বর ১৯৭২বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন খাতে, বিশেষ করে শিল্প, অর্থনৈতিক, যোগাযোগ, খাদ্য ও কৃষি খাতের সাধিত ধ্বংসযজ্ঞের ওপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, ‘এ নতুন দেশকে আঘাত থেকে উদ্ধার করে সচল করার জন্য একেবারে গোড়া থেকে যাত্রা শুরু করে প্রচণ্ড প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে  এগোতে হয়েছে।’ গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের আকারে সাধিত ইতিহাসের জঘন্যতম অপরাধের বিবরণ তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘দখলদার বাহিনী ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছে, দুই লাখ নারীর সম্ভ্রম নষ্ট করেছে। তারা বহু বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছে।’ সরাসরি পাকিস্তানের শাসকদের কথা উল্লেখ না করে বঙ্গবন্ধু অক্সফাম প্রতিনিধিদের বলেন, ‘বাঙালিদের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে আপনারা সহজেই অনুমান করতে পারেন। তবে বাঙালি জাতি হিসেবে ভালোবাসাপ্রবণ ও চরিত্রগতভাবে ক্ষমাশীল বলেই জনসাধারণ প্রতিশোধ না নিয়ে শান্তিতে বসবাস করার জন্য তিনি যে ডাক দেন, তাতে সাড়া দেয়।’

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘যারা হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধ করেছে, প্রকাশ্য আদালতে তাদের বিচার করা হচ্ছে এবং হবে। যারা অপরাধী সাব্যস্ত হবে, তাদের শাস্তি দেওয়া হবে।’

দৈনিক ইত্তেফাক, ৩০ ডিসেম্বর ১৯৭২খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা জরুরি

জাতীয় পুনর্গঠন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁর সরকার কৃষি খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে।’ দেশের দীর্ঘস্থায়ী খাদ্য সংকটের কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সরকারি প্রচেষ্টার লক্ষ্য হলো সম্ভাব্য সর্বাধিক কম সময়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা।’ এ প্রসঙ্গে তিনি ৩৫ হাজার পাওয়ার পাম্প আমদানির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‌‘এসব  পাওয়ার পাম্পের মাধ্যমে দেশে শীত মৌসুমের ফসল উৎপাদন বাড়ানো হবে। একই লক্ষ্যে আরও নানারকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’

পরিবার-পরিকল্পনার ডাক

এ পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু আশঙ্কাজনকভাবে জনসংখ্যা যে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা বন্ধ করার আহ্বান জানান এবং পরিবার পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘পরিবার-পরিকল্পনাকে জনপ্রিয় করার জন্য নারীদের যথাযথ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। সংবিধানে দেশের নারীদের সমান সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের সেবা করার চেতনায় যারা উদ্বুদ্ধ, তাদের স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের জন্য স্বাগত জানানো হচ্ছে। আমাদের জাতি গঠনমূলক কাজে সাহায্য করার জন্য তাদের স্বাগত জানাই।’

দৈনিক বাংলা, ৩০ ডিসেম্বর ১৯৭২ এদিকে ভারতের আইনমন্ত্রী এইচ আর গোখলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে এদিন সাক্ষাৎ করেন। তিনি তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন এবং বিভিন্ন ফোরামে আলোচনায় ও সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে উচ্চকিত প্রশংসা করেন তিনি।

রেডক্রস ১৫ হাজার বাঙালির তালিকা করেছে

আন্তর্জাতিক রেডক্রস বাংলাদেশিদের প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করার জন্য ১০ হাজার বাঙালি নারী, শিশু ও ৫ হাজার কর্মহীন লোকের একটি তালিকা তৈরি করে। এদিন করাচিতে এই তালিকার বিষয়ে খবর পরিবেশিত হয়। পাকিস্তান সরকার দুই মাস আগে ঘোষণা দিয়েছিল যে অদূর ভবিষ্যতে এসব বাঙালির দেশে প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। করাচি থেকে চট্টগ্রামের পথে এসব বাঙালি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করবে বলে সুনির্দিষ্টভাবে এ দিনের সংবাদে প্রচারিত হয়।