বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে নতুন করে সহায়তার আশ্বাস জাতিসংঘের

দৈনিক ইত্তেফাক, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৭২(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বরের  ঘটনা।)

বাংলাদেশে আনরড প্রধান ভিক্টর উমব্রিথট বলেছেন, বাংলাদেশকে খাদ্যশস্য ও অন্যান্য সাহায্যদানের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব কুর্ট ওয়াল্ডহেউম খুব শিগগিরই বিশ্বসমাজের প্রতি নতুন করে আহ্বান জানাবেন। ১৯৭২ সালের ৩০ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা পর্বে উইমব্রিথট এ কথা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বিশ্ব সংস্থা বাংলাদেশের খাদ্য সমস্যা সম্পর্কে সচেতন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দীর্ঘ মেয়াদের ভিত্তিতে এই নবজাত রাষ্ট্রকে সাহায্য দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যে পর্যন্ত খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন না করতে পারবে, সে পর্যন্ত বিশ্ব সংস্থা বাংলাদেশকে খাদ্য সাহায্য দিয়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর খরা ও বন্যায় বাংলাদেশের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে এবং এর ফলে খাদ্য ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে।’

উইমব্রিথট বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এই সাক্ষাৎকারে তিনি মূলত বাংলাদেশের খাদ্য পরিস্থিতি, কৃষির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প, পাওয়ার পাম্পের যন্ত্রাংশ, সার, কীটনাশক, ওষুধপত্র সরবরাহের বিষয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।’   এনা পরিবেশিত খবরে বলা হয়, মিস্টার উমব্রিথট উল্লেখ করেন যে, স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিধ্বস্ত হয় এবং ঘরবাড়ি ক্ষেত-খামার বিনষ্ট হওয়ায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড যেমন ভেঙে গিয়েছিল, তেমনই দেশের খাদ্য পরিস্থিতির ওপর এর প্রভাব পড়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সফরের আরও খবর

প্রধানমন্ত্রী ২ জানুয়ারি বরিশাল যাচ্ছেন বলে তার কর্মসূচি প্রকাশ করা হয়। কর্মসূচি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান বরিশাল ও পটুয়াখালীতে দুদিনব্যাপী সফরে ঢাকা ত্যাগ করবেন। একাধিক সভা শেষে ৪ জানুয়ারি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি। খবরে প্রকাশ, প্রধানমন্ত্রী ২ জানুয়ারি সকালে ঢাকা থেকে বিমানযোগে পিরোজপুর যাবেন। দুপুরে সেখানে তিনি এক জনসভায় ভাষণ দেবেন। এরপরই তিনি বরিশাল যাবেন এবং একই দিন বিকালে সেখানেও জনসভায় তাঁর বক্তৃতা করার কথা জানানো হয়।

দি বাংলাদেশ অবজারভার, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৭২মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে এদিন মন্ত্রিপরিষদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা দেড়ঘণ্টা চলার পর পরের দিন পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়। এদিকে আগামীকাল (৩১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিটে বেতারের মাধ্যমে ১৯৭৩ সালের জন্য আমদানি নীতি ঘোষণা করা হবে বলে পত্রিকায় জানানো হয়। ঘোষণার পরদিন (১ জানুয়ারি) পরিকল্পনা কমিশনের সম্মেলন কক্ষে আমদানি নীতি সম্পর্কিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি বিস্তারিত জানানো হবে।

অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা হচ্ছে

নির্বাচনের জন্য শিগগিরই রাষ্ট্রপতির তরফে একটি আদেশ জারি করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি এ খবর প্রকাশ করে। দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে এই আদেশ জারি করা হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছভাবে অনুষ্ঠানের যাবতীয় ব্যবস্থা আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন হবে। পিবিআই’র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেন তিনি।

দৈনিক বাংলা, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৭২সিইসি ইদ্রিস আরও বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচন হবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ। আর এটি নিশ্চিত করতে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’ পরিষ্কার ভাষায় তিনি যাবতীয় প্রস্তুতির বিষয় উল্লেখ করেন এবং বলেন, ‘কোনও মহলের হস্তক্ষেপ ছাড়াই নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করে আসছে।’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জনগণ যেসব আপত্তি করেছেন, সে ব্যাপারে কমিশন ব্যস্ত রয়েছে।’ তবে তিনি বলেন, ‘ভোটার গণনাকারীরা প্রতি ঘরে ঘরে গিয়ে তার দায়িত্ব পালন করায় খুব সামান্য আপত্তি পাওয়া গেছে।’ সিইসি ইদ্রিস বলেন, ‘চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ছাপানোর কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য কমিশন অফিসের কর্মচারীরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন।’