আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১১ জানুয়ারির ঘটনা।)

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ দলের মনোনয়ন লাভে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের কাছ থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করেন। ১৯৭৩ সালের এই দিনে আবেদনপত্র পেশ করার সর্বশেষ তারিখ জানিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্ধারিত ফরমে আবেদনপত্র করতে হবে। আওয়ামী লীগ অফিসে ৫ টাকা মূল্যে পাওয়া যাবে আবেদনপত্র। পার্লামেন্টারি বোর্ডের সঙ্গে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করা হবে। বিভিন্ন বিভাগীয় পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রার্থীদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সদর দফতরে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হবে।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি বোর্ড গঠিত

১৯৭৩ সালের এই দিনে গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কমিটির সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে চেয়ারম্যান করে ১০ সদস্যবিশিষ্ট আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি বোর্ড গঠন করা হয়। পার্টি প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির ৭২ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। অনিবার্য কারণে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, সাহায্য ও পুনর্বাসন মন্ত্রী কামরুজ্জামান এবং খাজা আহমেদ সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। সভায় শেখ নজরুল হক মণিকে আহ্বায়ক করে নির্বাচনি ম্যানিফেস্টো সাব-কমিটি এবং নুরুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে নির্বাচনি প্রচার সাব-কমিটি গঠন করা হয়। সব মিলিয়ে নির্বাচনের প্রাথমিক কাজ শুরু করেন তারা।

সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা করুন

আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কমিটি দেশের জনগণকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে সতর্ক করে দেন এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের প্রতিরোধ করে সাধারণ নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতকরণ কাজে সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

১৯৭৩ সালের ১১ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কমিটির সভার দুটি অধিবেশনের দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড নির্বাচনি কমিটি ও নির্বাচনি প্রচার কমিটি গঠন ছাড়াও রাজনৈতিক প্রস্তাব গৃহীত হয়। নির্বাচন বানচাল এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সুষ্ঠু ও অনুকূল পরিবেশে জনগণকে তাদের মতামত প্রকাশের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অপচেষ্টার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করা হয়। স্বার্থান্বেষী মহলের দুরভিসন্ধিমূলক কার্যকলাপ প্রতিহত করে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

সফর শেষে ঢাকায় ফিরলেন বঙ্গবন্ধু

দুদিন নাটোরের উত্তরা গণভবনে অবস্থানের পর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশে নাটোর ত্যাগ করেন। হেলিকপ্টারটি উত্তরা গণভবনের বিরাট ময়দানে অবতরণ করে। স্থানীয় জনসাধারণ বঙ্গবন্ধুকে আন্তরিকভাবে বিদায় সংবর্ধনা জানান। প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় দেওয়ার জন্য জনতা সমবেত হয়। তারা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তোলে।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুদিন কর্মব্যস্ত দিন অতিবাহিত করেন। সকাল থেকে হাজার হাজার জনতা তাকে একনজর দেখার জন্য উত্তরা গণভবনের সামনে জমায়েত হয়। বঙ্গবন্ধু তাদের সাক্ষাৎদান করেন এবং বিভিন্ন অভাব-অভিযোগের কথা শোনেন। তিনি যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সান্ত্বনা জানান এবং প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। রাজশাহী বিভাগের সকল জেলা আওয়ামী লীগ কর্মীরা পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বঙ্গবন্ধু তাদের সঙ্গে সাংগঠনিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব আসছেন

বিপিআই’র খবরে জানানো হয়, জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল ওয়ার্ল্ড হেইম ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসবেন। ঢাকায় অবস্থানকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। খবরে বলা হয়, ওয়ার্ল্ড হেইম বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও জাপান সফর করবেন। উপমহাদেশের বর্তমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছিলেন।

পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধের শঙ্কা

পাকিস্তানের শাসনতান্ত্রিক সংকট চরমে উঠেছিল সে সময়। তা এমন অবস্থায় পৌঁছে যে পাকিস্তানে যেকোনও মুহূর্তে গৃহযুদ্ধ দেখা দিতে পারে। গার্ডিয়ান পত্রিকায় পাকিস্তানের সংবাদদাতার বরাত দিয়ে এ দাবি করা হয়। গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, গত অক্টোবরে পাকিস্তানের  দশটি রাজনৈতিক দল হুমকি দেয় যে খসড়া শাসনতন্ত্র আগাগোড়া সংশোধন না করা হলে তারা পরিষদের অধিবেশন বয়কট করবেন।