ইসরায়েলের দখলকৃত ভূখণ্ড উদ্ধারে বঙ্গবন্ধুর সমর্থন

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ  থাকছে ১৯৭৩ সালের ১৫ জানুয়ারির ঘটনা। উল্লেখ্য, ঈদের ছুটির কারণে ১৯৭৩ সালের ১৫ থেকে ১৭ জানুয়ারি পত্রিকা বের না হওয়ায় ১৮ জানুয়ারি প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।)

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসরায়েলের দখলকৃত আরব ভূখণ্ড উদ্ধারে আরব দেশগুলোর সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান। আল আখবার পত্রিকাকে ১৫ জানুয়ারি তিনি এ কথা বলেন। ১৯৭৩ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৭ জানুয়ারি পত্রিকা বের না হওয়ায় ১৮ জানুয়ারি এই সংবাদ প্রধান খবর হিসেবে প্রকাশ করা হয়।

রাজধানী ঢাকায় উক্ত পত্রিকার প্রতিনিধি সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, আমরা সবসময় আপনাদের (আরবদের) সঙ্গে থাকবো। কারণ, আপনারা ন্যায়সঙ্গত অধিকার তথা ইসরায়েলের দখলকৃত ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের জন্য সংগ্রাম করছেন এবং প্যালেস্টাইনের জনগণকে তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার পুনরায় অর্জন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য আরব দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। পত্রিকাটিতে আরও বলা হয়, বঙ্গবন্ধু আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে বা এখনও হচ্ছে, আরব বিশ্ব সে ব্যাপারে সহানুভূতিশীল হবে।

দুই নেতার মাজারে বঙ্গবন্ধু

১৭ জানুয়ারি ঈদের পরদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও একে ফজলুল হকের মাজার জিয়ারত করেন। তিনি মাজারে ফাতেহা পাঠ করেন। সেখানে মাজারের স্মৃতিফলকে পরলোকগত নেতার শেষ চিঠির কিছু অনুভূতি সংযুক্ত রয়েছে। তার যোগ্য রাজনৈতিক উত্তরসূরি হিসেবে শেখ মুজিবের নাম উল্লেখ করে চিঠিটি শুরু করা হয়।

পাটের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করতে হবে

বাণিজ্যমন্ত্রী এম আর সিদ্দিকী দামের উঠানামা এবং কৃত্রিম তন্তুর প্রতিযোগিতার বিপদ থেকে পাটের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করার প্রয়াস নেওয়ার আহ্বান জানান। পাঠ সম্মেলন উদ্বোধন করে বাণিজ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, একরপ্রতি পাট উৎপাদন কমে গেছে। সম্মেলনে যোগদানকারী বিশেষজ্ঞদের কাছে পাটের সমস্যাবলি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরে সমস্যাগুলোর যোগ্য ও স্থায়ী সমাধান বের করার আহ্বান জানান। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পাটের গুরুত্ব উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের শতকরা ৭৫ দশমিক ৮৮ আসে পাট থেকে। এতে বোঝা যায় বাংলাদেশের ভাগ্য এর সঙ্গে কীভাবে জড়িত।

বাংলাদেশ যেভাবে নিপীড়নের শিকার

পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ বৈদেশিক সাহায্য পশ্চিমাঞ্চলে ব্যয় করতো। পাকিস্তানি শাসকরা ২৪ বছর বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ বিদেশি সাহায্য ঠিকমতো কাজে লাগায়নি। পূর্বাঞ্চলের বিদেশি সাহায্য তারা সাবেক পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নতির জন্য ব্যয় করতো। লন্ডনের দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এ তথ্য প্রকাশ করে। বাংলাদেশের বিজয় দিবস উপলক্ষে পত্রিকাটির এক বিশেষ সংখ্যার প্রবন্ধে সুস্পষ্ট ভাষায় বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পের বৈদেশিক সাহায্য কীভাবে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নতির জন্য ব্যয় করা হতো তা উল্লেখ করা হয়। পত্রিকাটি জানায়, পূর্বাঞ্চলের জন্য পাকিস্তানের যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হতো তার অধিকাংশই সুপরিকল্পিত এবং উক্ত অঞ্চলের জন্য প্রয়োজনীয় নয়। শাসকদের অজ্ঞতার ফলে অতি প্রয়োজনীয় প্রকল্পের কাজ নষ্ট করা হয়।

গঙ্গা-কপোতাক্ষ পরিকল্পনা সম্পর্কে পত্রিকাটি মন্তব্য করে, গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্পের পানি সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা কার্যকর করে ৩ লাখ ৫০ হাজার একর জমিতে পানি গ্রহণ করার জন্য ১৬ বছরে ১৩ কোটি ২০ লক্ষ টাকা আয় করা হয়। ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত সরকারি রিপোর্টে বলা হয়, ১৯৬১ সাল পর্যন্ত মাত্র ৩৩ হাজার আমন ধান ক্ষেতে পানি সেচের ব্যবস্থা করা হয়। এই রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ৩ লক্ষ ৫০ হাজার একর জমিতে পানি সিঞ্চন করাই লক্ষ্য ছিল বটে, কিন্তু পরিকল্পনা অনুসারে মোট ৬০ হাজার একর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব ছিল।