বঙ্গবন্ধু কাউকে অনাহারে মরতে দেননি

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ থাকছে ১৯৭৩ সালের ১৭ জানুয়ারির ঘটনা।)

সানডে টাইমসের খবরে বলা হয়, বাংলাদেশে জাতিসংঘ যে বিপুল পরিমাণ সাহায্য পাঠিয়েছে, তা বহুল পরিমাণে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। পত্রিকাটিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সামরিক অভিযান ও যুদ্ধের সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশকে দ্রুত পুনর্গঠন করা হচ্ছে, দেশটি এগিয়ে চলেছে। খবরে ১৯৭১ সালের গণঅভ্যুত্থান ও পরবর্তীকালে চাকরির অভাবের কথা উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি ব্যক্তিগতভাবে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ না করতেন তাহলে সেখানে বিশৃঙ্খলা দেখা যেত। জাতির জনক ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধু একাই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে একটি সচিবালয় গড়ে তোলা এবং মাত্র নয়মাসের মধ্যে দেশকে একটি শাসনতন্ত্র প্রদান করায় পত্রিকাটি প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে এবং এর কৃতিত্ব সবটাই বঙ্গবন্ধুর বলে মনে করে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বঙ্গবন্ধু অনাহারে কাউকে মরতে দেননি।

দু'দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার হবে

জার্মান গণসাধারণতন্ত্রের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ওয়াল্টার উলব্রাইখট, মন্ত্রী পরিষদের চেয়ারম্যান উইলি স্টফ জার্মানি ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদের কাছে অভিনন্দন বাণী পাঠান। পূর্ব জার্মানি প্রভাবশালী সংবাদপত্রে এ খবর প্রচার করা হয়। বঙ্গবন্ধু কাছে প্রেরিত বাণীতে স্টফ দাবি করেন, গত বছরে আমাদের দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক অধিকারের ভিত্তিতে প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে আন্তরিক বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে ভবিষ্যতে আরও সংহত ও জোরদার হবে বলে তিনি আশা করেন।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে স্যার জ্যাকসনের সাক্ষাৎ

জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল স্যার রবার্ট জ্যাকসন ১৯৭৩ সালের এই দিনে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আধা ঘণ্টা অবস্থান করেন এবং নানা বিষয়ে আলাপ করেন বলে বাসস খবর দেয়।

রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থই পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে

বাংলাদেশ তৎকালীন আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন এই দিনে বলেন, পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধের বিচার সংক্রান্ত আমাদের তদন্ত পরিচালনায় বর্তমানে প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানো গেছে। প্রকৃতপক্ষে আমরা এখন লিখিত অভিযোগ তৈরি করছি, যা তদন্ত পরিচালনা পদ্ধতির শেষ পর্যায়। বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মনে করেন দুমাসের মধ্যে বিচার শুরু হবে। এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধী ও যুদ্ধবন্দীদের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের কৃত অপরাধের জন্য বিচারের সম্মুখীন শাস্তি পাওয়ার যোগ্য এবং যারা যুদ্ধবন্দি তারা এর মধ্যে পড়ে না। পাকিস্তানের অনবরত মিথ্যা ধারণা প্রচারের বিষয়ে তিনি বলেন, পাকিস্তানের এ ধরনের মিথ্যা ধারণা বাংলাদেশের বাস্তবতা স্বীকারের অস্বীকৃতি, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তার অব্যাহত বিরুদ্ধাচরণ সুস্পষ্ট নজির বহন করে।

 

ঢাকায় এশিয়া শান্তি সম্মেলন

বাংলাদেশ সফরে আগত বিশ্ব শান্তি পরিষদের সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধিদল এই দিন বিকেলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বাসসের খবরে বলা হয়, পার্লামেন্ট সদস্য ও বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির সদস্য জন ট্যাকমান, বিশ্ব শান্তি পরিষদের সেক্রেটারি ও পি পালিওয়ালকে প্রতিনিধি দলে রয়েছেন। আগামী এপ্রিল মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় শান্তি সম্মেলন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তারা আলোচনা করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা কালে পালিওয়াল বলেন, দুদিনব্যাপী এশীয় শান্তি সম্মেলনের উদ্বোধনী দিবসে বিশ্ব শান্তি পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরি পদক প্রদান করবেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্মেলন উদ্বোধন করবেন বলেও তিনি জানান।

রেশনে চাল সংকট

রেশনের দোকানে চাল তীব্র সংকটের কারণে ঢাকার বাজারে চালের মন একশত টাকা পর্যন্ত উঠে গেছে। ঢাকার রেশন ডিলাররা এক সাংবাদিক সম্মেলনে সম্প্রতি জানান, এখন থেকে চাল বরাদ্দ অর্ধেক করে দেওয়ার জন্য তাদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানালেও এ ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এ ধরনের নির্দেশ কিভাবে জারি করা হলো তা সর্বত্র এক প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, এ ধরনের সিদ্ধান্তে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি।