বাঙালির অনুভূতিতে একাত্ম হয়ে আছেন বঙ্গবন্ধু

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২০ জানুয়ারির ঘটনা।)

১৯৭৩ সালের ২০ জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান আবদুর রাজ্জাক এক সভায় বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রত্যেক নর-নারীর অনুভূতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্ম হয়ে আছেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশবাসী দীর্ঘদিন থেকে সংগ্রাম চালিয়ে আসছিল। শেষ পর্যন্ত তা এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলা হিসেবে পরিপূর্ণতা লাভ করে।’

সমাজতন্ত্রে গণতন্ত্রকে সুনিশ্চিত করাই মুজিববাদের লক্ষ্য উল্লেখ করে রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের জন্য সমাজতন্ত্র চাই। কিন্তু সেটা গণতন্ত্রকে বলি দিয়ে নয়। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে সুনিশ্চিত করাই মুজিববাদের আদর্শ ও লক্ষ্য।’ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে মুজিববাদ শীর্ষক আলোচনা প্রসঙ্গে এ বাহিনীর প্রধান আব্দুর রাজ্জাক এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষের  মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু সংগ্রামী আহ্বান জানিয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতি হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে।’

দৈনিক ইত্তেফাক, ২১ জানুয়ারি ১৯৭৩দুদিনব্যাপী আয়োজিত সম্মেলন শেষে এদিন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর জেলা প্রধান, থানা প্রধান ও উপপ্রধান গণভবনে গেলে তাদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু কিছু কথা বলেন। পরের দিনের পত্রিকায় সেই ছবি প্রকাশ করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে হবে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি

১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের জন্য কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, তা নির্ধারণের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে খুব শিগগিরই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি গঠন করার কথা জানানো হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মান্নান এদিন ঢাকায় বাসস প্রতিনিধিকে জানান, প্রস্তাবিত কমিটি আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থা ও অন্যান্য দফতরের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হবে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি এবং শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করবেন। তিনি বলেন, ‘দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সরকার এযাবৎ পুলিশ বাহিনীতে ৩০০ ক্যাডেট, ১৫ হাজার কনস্টেবল, রক্ষীবাহিনীতে ১০ হাজার লোক এবং বাংলাদেশ রাইফেলসে ৩ হাজার অফিসার ও সৈনিক নিয়োগ করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এই তিন বাহিনীকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।’

বাংলাদেশ অবজারভার, ২১ জানুয়ারি ১৯৭৩ঢাকার সব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য বঙ্গবন্ধুর প্রতি অনুরোধ

ঢাকা নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে ঢাকা নগরীর সব আসনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুরোধ জানানো হয়। এদিন সন্ধ্যায় ঢাকা নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কমিটির বর্ধিত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ প্রস্তাব গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী গোলাম মোস্তফা। সভায় আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা ও নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির অনুকূলে কতিপয় পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়।

খাদ্যশস্য সরবরাহে যাবতীয় যানবাহন নিয়োগের সিদ্ধান্ত

বাংলাদেশ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে দেশের বিভিন্ন স্থানে দ্রুত খাদ্যশস্য পাঠানোর জন্য সব ধরনের যানবাহন নিয়োগে সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ও খাদ্যশস্য পরিবহনের অসুবিধা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে বিদেশ থেকে আরও খাদ্যশস্য আমদানির ব্যবস্থা করার বিষয়ও আলোচিত হয়েছে। দুই ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বাণিজ্যমন্ত্রী এম আর সিদ্দিকীসহ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সরকার দেশের বর্তমান খাদ্য ঘাটতি পূরণের জন্য জাপান থেকে ২ লাখ টন খাদ্যশস্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে বলেও খবর প্রকাশিত হয়। সরকারি মুখপাত্রের বরাত দিয়ে এদিন ডিপিআই জানায়, এ ব্যাপারে জাপান সরকারের সঙ্গে  উচ্চ পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।

দৈনিক ইত্তেফাক, ২১ জানুয়ারি ১৯৭৩আটকে পড়া বাঙালিদের বিচারের কঠোর সমালোচনা

এই দিনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ বলেন, ‘পাকিস্তানে আটকে পড়া যেসব বাঙালি বাংলাদেশে আসতে চেয়েছেন, তাদের বিচার করার ন্যায়সঙ্গত অধিকার পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর নেই।’ সিলেট থেকে ঢাকায় ফিরে আসার পর বার্তা সংস্থা বিপিআই প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব বাঙালি বাংলাদেশে ফিরে আসতে চান, তারা একান্তই নিরীহ ও শান্তিকামী মানুষ। তারা কোনও অপরাধ করেননি। কোনোভাবেই যুদ্ধে বা অন্য কোনও তৎপরতায় তাদের সংস্রব ছিল না।’