ভারতের উপহার হিসেবে দেশে আসছে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন ‘কোভিশিল্ড’। মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) রাতে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ভারত থেকে আসা এ টিকা দেশে আসার পর এ মাসেই প্রয়োগ শুরু হতে পারে বলে আশা করছেন তিনি।
বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, 'মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতরে গিয়েছিলাম। সেখানে যাই ভ্যাকসিনবিষয়ক কার্যক্রমের প্রস্তুতি কেমন-সেসব দেখতে, জানতে। তারা কী কী ব্যবস্থা নিলো সেগুলো পর্যবেক্ষণ করতে।' তিনি জানান, টিকা কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মূখ্যসচিবের নেতৃত্বে।
তাহলে কি এই মাসেই টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে বলা যাবে কিনা প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত কোনোকিছু কংক্রিট বলা মুশকিল। আমরা আশা করছি, বৃহস্পতিবার আসবে। তারপর বণ্টনের কাজ। এতে ৬-৭ দিন সময় লাগবে। তবে এ মাসেই প্রয়োগ শুরু হবে বলে মনে করছি।’
তিনি আরও বলেন, 'এ মাসে হয়তো একটা ট্রায়াল রান করতে পারি। তারপর হয়তো পুরো দেশজুড়ে ভ্যাকসিন বিতরণ শেষ হয়ে গেলে তখন একযোগে সারাদেশে দেওয়া শুরু হয়ে যাবে। এগুলো সবই নির্ভর করছে বৃহস্পতিবার ভ্যাকসিন পাওয়ার ওপর।'
এদিকে, চলতি মাসেই ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, 'মঙ্গলবার এ বিষয়ে একটি পরিকল্পনা হয়েছে। ঢাকাতেই শুরু করার একটা সম্ভাবনা আছে।'
এদিকে, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা ও মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৫ সদস্যের জাতীয় কমিটি গঠন করেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। এ ছাড়া ১৪ সদস্যের আরেকটি ক্যাজুয়ালটি অ্যাসেসমেন্ট কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর এ কমিটি গঠন করে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে জমা দিয়েছে।
সে চিঠিতে বলা হয়, ভ্যাকসিনের মান নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভ্যাকসিনের মান নিশ্চিতকরণ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ব্যবহারজনিত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ফার্মাকোভিজিল্যান্স প্রোটোকল প্রণয়ন করে, যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ অনুমোদন করেছে।
অপরদিকে, টিকা দেশে আসার পর সেটি কীভাবে সংরক্ষণ করা হবে সে পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম এ পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি বলেন, 'এসব টিকা কেন্দ্রীয় ওষুধাগার (সিএমএসডি), মহাখালীতে অবস্থিত সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির প্রধান কার্যালয় এবং তেজগাঁওয়ে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির নিজস্ব সংরক্ষণাগারে রাখা হবে।'
এর আগে গত ১১ জানুয়ারি ‘কোভিড-১৯ টিকা প্রয়োগ পরিকল্পনা’ সম্পর্কে জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে টিকা বিতরণ কমিটির সদস্য ডা. শামসুল হক জানান, এসব টিকা ওয়াক ইন কুলে (ছোট ঘরের মধ্যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ) রাখা হবে। দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ২৯টিতে ওয়াক ইন কুল তৈরি করা হয়েছে।বাকি ১৮ জেলায় ওয়াক ইন কুল তৈরি করা হচ্ছে। অনেক বেশি টিকা আসার আগে এসব জেলাতেও ওয়াক ইন কুল তৈরি হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে এসব জেলায় আইএলআর (হিমায়িত বাক্সের মধ্যে সংরক্ষণ) রয়েছে।
এছাড়াও দেশের ৪৮৩টি ইপিআই সেন্টারে এই আইএলআর রয়েছে। সেখানেও টিকা রাখা হবে।
মঙ্গলবার অধ্যাপক খুরশীদ আলম জানান, সরকারের কেনা তিন কোটি ডোজ টিকার প্রথম চালান হাতে পাওয়ার পর সব জেলায় একসঙ্গে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা।
'প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্যকর্মীদের কিছু টিকা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এক সপ্তাহ পর সব জেলায় শুরু করা হবে। এটাই আমাদের পরিকল্পনা'—বলেন তিনি।
ভারতের উপহারের ২০ লাখ ডোজ টিকা কখন কাকে দেওয়া হবে জানতে চাইলে খুরশীদ আলম বলেন, ‘এখনও এ বিষয়ে নির্দেশনা পাইনি। মন্ত্রণালয় আমাদের যেভাবে জানাবে, সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগে গত ১১ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে যে তিন কোটি ডোজ টিকা কেনা হবে সেটি দেশে আসছে ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির ভেতরে। আর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে টিকা দেওয়া শুরু হবে। আর সেজন্য আগামী ২৬ জানুয়ারি থেকে অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হবে।