ভোটে সেনা মোতায়েন হবে: বঙ্গবন্ধু

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২২ জানুয়ারির ঘটনা।)

১৯৭৩ সালের ২২ জানুয়ারি এক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে বক্তৃতা করছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিশ্চয়তা বিধানে সরকার দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। বাসস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে নির্বাচনকালে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার পথ ও পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়। এই সম্মেলনে ভোটগ্রহণের সময় শান্তিরক্ষায় পুলিশ, আনসার, বাংলাদেশ রাইফেলস, রক্ষীবাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সম্মেলনে সামগ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে নির্বাচনের কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মুখ্য সচিব রুহুল কুদ্দুসকে চেয়ারম্যান করে একটি সংস্থা গঠিত হয়। এই সম্মেলনে ফেব্রুয়ারি মাসের ১০/১১ তারিখ জেলার ডেপুটি কমিশনার ও পুলিশ সুপারকে সম্মেলন আহ্বানের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। সেই সম্মেলনে তাদের শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কর্মসূচি অবহিত করা হবে বলেও জানানো হয়।

দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করুন

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি জাতি পুনর্গঠন ও দেশের প্রগতির কাজে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু বলেন, জাতি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গর্বিত। কারণ, দেশকে মুক্ত করার জন্য তারা লড়াই করেছেন এবং সবকিছু ত্যাগ করেছেন। স্বাধীনতার পর দেশের মানুষের কল্যাণ সাধনে নিজেদের নিয়োজিত করে তারা মহান ভূমিকা পালন করতে পারেন বলে উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৩ সালের এই দিনে দুদিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলনের শেষে গণভবনে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন তিনি। সংবাদ সংস্থা বাসস জানায়, এ সময় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধ সম্মেলনের অভ্যর্থনা কমিটির চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবনে প্রবেশ করলে সমবেত মুক্তিযোদ্ধারা গগনবিদারী কণ্ঠে ‘জয় বঙ্গবন্ধু, জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানায়। ‘বঙ্গবন্ধু যেখানে আমরা আছি সেখানে’ স্লোগানও দেন তারা।

দেশের স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করে সংক্ষিপ্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, দেশ পুনর্গঠনে প্রত্যেকের সমান দায়িত্ব রয়েছে। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা আগে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় মুক্তিযোদ্ধা ট্রাস্টকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ-রক্ষীবাহিনী, ভোগ্যপণ্য সরবরাহ করপোরেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরকার ১ লাখ মুক্তিযোদ্ধাকে চাকরি দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, কেউ কেউ নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয় দিয়ে সমাজবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়ে মানুষের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের হেয় করার চেষ্টা করছে। তিনি সমাজবিরোধী তৎপরতা দমনে পুনরায় মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা কামনা করেন।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জেসারের আলোচনা

বাংলাদেশ সফররত পশ্চিম জার্মানির অর্থনৈতিক প্রতিনিধি দলের নেতা ডক্টর জেসার এই দিন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, উপমহাদেশ এবং ইউরোপে শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ইউরোপের সমস্যা এবং সেখানকার উত্তেজনা প্রশমনে তার দেশের নীতি সম্পর্কে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুও উপমহাদেশের সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা সম্পর্কে বাংলাদেশের নীতি ব্যাখ্যা করেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনের পরিকল্পনা এবং উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছে বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে তার দেশ যেমন এই উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করেছিল, ঠিক তেমনি অশান্তির কারণগুলো দূর করতে সবরকম সাহায্যদানে প্রস্তুত। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের নীতি বঙ্গবন্ধু জানিয়েছেন। জেসার পশ্চিম জার্মানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি এবং এশিয়া বিভাগের প্রধান। তিনি ৭ সদস্যবিশিষ্ট পশ্চিম জার্মানি অর্থনৈতিক প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে বাংলাদেশ সফরের উদ্দেশে ১৯ জানুয়ারি ঢাকা আসেন।

প্রস্তুত হচ্ছে নির্বাচনি আচরণবিধি

১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনের জন্য সরকার একটি আচরণবিধি প্রণয়ন করতে পারে। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এই আচরণবিধি প্রকাশ করা হবে বলে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সরকার কর্তৃক নিযুক্ত একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি আচরণবিধি প্রস্তুত করছেন। সরকারের জারি করা এই নীতিমালা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল অনুসরণ করবে। আচরণবিধি চূড়ান্ত করার পূর্বে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রস্তাব পরীক্ষা করে দেখা হবে বলেও জানানো হয়।