যশোরে আধুনিক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি কাজী নাবিলের

যশোরে আধুনিক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) যশোর-৩ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এই সংসদ সদস্য এ দাবি করেন। তিনি যশোর অঞ্চলে কৃষি অর্থনীতির নানাদিক তুলে ধরেন। 

ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে কাজী নাবিল বলেন, ‘আমরা বর্তমানে বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আছি। বাংলাদেশ করোনা মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক সব সূচকে ভালো অবস্থায় আছে। অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন করোনার কারণে হয়তো পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া পদক্ষেপ ও সঠিক পরিকল্পনার কারণে বাংলাদেশ অনেক ভালো অবস্থানে আছে।’

২৫ জানুয়ারি ৫০ লাখ ভ্যাকসিন আসার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমাদের সুশীল সমাজের একটি অংশ, বিএনপি-জামায়াতসহ অনেকেই বারবার বলেছিল করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। কিন্তু তা হয়নি। তারা বলেছিল ভ্যাকসিন আসবে না। ভ্যাকসিন এসেছে। বর্তমানে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাতে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকার আরও বেশি এগিয়ে যেতে পারবে।’ তিনি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সবাইকে একসঙ্গে কাজ এবং করোনা পরিস্থিতি সুন্দরভাবে মোকাবিলা করে সরকারের নেওয়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেন।

যশোর-৩ নির্বাচনি এলাকার মানুষ তাকে পরপর দুইবার আস্থায় নিয়ে নির্বাচিত করেছেন মন্তব্য করে কাজী নাবিল বলেন, ‘বর্তমান সরকারের ১২ বছরে যশোরে যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে, অতীতে কখনোই তা হয়নি। যশোরে বর্তমানে একটি মেডিক্যাল কলেজ করা হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে দ্বিগুণ পরিমাণ উন্নয়ন কাজ চলছে। যশোরের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার ফসল ভৈরব নদ খনন করে সচল করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যশোরকে প্রথম ডিজিটাল জেলা ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার আইটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে।’

তিনি ভৈরব নদী খননের কাজ আরও বেগবান করার আহ্বান জানান। কৃষি অর্থনীতিতে যশোরের ভূমিকা তুলে ধরেন তিনি। যশোরে একটি আধুনিক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে মানুষকে কৃষি অর্থনীতিতে আরও বেশি সুযোগ করে দেওয়ার অনুরোধ জানান এই জনপ্রতিনিধি। পৌরসভার রাস্তাঘাট প্রশস্তকরণসহ উন্নয়নে নেওয়া পদক্ষেপ বেগবান করারও অনুরোধ করেন তিনি।

কাজী নাবিল আহমেদ দড়াটানা নদীর পাড়ে ওয়াকওয়ে ও ঝুলন্ত ব্রিজ তৈরির জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান। যশোর আড়াইশ’ শয্যার হাসপাতালকে ৫০০ শয্যায় ‍উন্নীতকরণের যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়নের অনুরোধ করেন সরকারি দলের এই এমপি। তিনি যশোর আড়াইশ’ শয্যা হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার, সিসিইউ স্থাপনের অনুরোধ করেন।

একইসঙ্গে তিনি যশোর বিমানবন্দরকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিণত করার দাবি করেন। তিনি যশোরে একটি ইপিজেড ও দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার দাবি জানান।

মুজিববর্ষ আরও জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালনের আয়োজন ছিল, কিন্তু করোনা মহামারির কারণে কিছুটা সংকুচিত পর্যায়ে ভার্চুয়ালি পালন হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের মধ্যে উন্নয়নের রোড মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। যখনই বিশ্বে বাংলাদেশ নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশের মাতৃসেবা, শিশু মৃত্যুর হার রোধ, নারী শিক্ষাসহ সব সামাজিক সূচক নিয়ে- সব সূচকেই বাংলাদেশ এগিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এমডিজি অর্জন করে এসডিজি অর্জনের দিকে এগিয়ে চলেছে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ মেগা প্রকল্প হয়েছে তা বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের পদ্মা সেতু বর্তমানে দৃশ্যমান। ২০২২ সালে এ সেতু চালু হলে দেশের প্রবৃদ্ধি আরও এক দশমিক দুই শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। প্রতিবছর শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য নিরসন হবে। পায়রা সমুদ্রবন্দর, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দরসহ অসংখ্য প্রকল্পের কাজ চলছে।’

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলেছে উল্লেখ করে কাজী নাবিল বলেন, ‘১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমরা দেখেছি, অনেক উন্নত দেশে রাস্তায় তাঁবু করে শরণার্থীদের দিনরাত যাপন করতে হচ্ছে। সেখানে ভাসানচরে আধুনিক একটি স্থাপনা তৈরি করে তাদের থাকার ব্যবস্থা দেওয়ায় অনন্য নজির স্থাপন হয়েছে।’