নৌকা কেন আওয়ামী লীগের, জবাব দিলো কমিশন

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২৭ জানুয়ারির ঘটনা।)

১৯৭৩ সালের প্রথম নির্বাচনে একাধিক দল দাবি করলেও আওয়ামী লীগকে কেন নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হলো, নির্বাচন কমিশন এদিন সেই জবাব দিয়েছিল। ওই বছরের জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে নির্বাচনি প্রতীক বণ্টন করা হয়। এরপর বরাদ্দের বিষয়ে যে প্রশ্ন ওঠে, নির্বাচন কমিশন বিজ্ঞপ্তি মারফত তার ব্যাখ্যা দেয়।

নির্বাচনি প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নৌকা বরাদ্দের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যা হলো—আওয়ামী লীগ সত্তরের নির্বাচনে এই প্রতীক ব্যবহার করেছে। এ কারণে আসন্ন নির্বাচনে দলটির উল্লিখিত প্রতীক ব্যবহারের অধিকার রয়েছে। এই যুক্তির ভিত্তিতেই আওয়ামী লীগকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ করা হয়েছে। কমিশন জানায়, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনি প্রতীক হিসেবে নৌকা চেয়েছিল। প্রতিষ্ঠিত নীতি অনুযায়ী, আওয়ামী লীগকে নৌকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দলগুলোর দাবি অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দ করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশ অবজারভার, ২৮ জানুয়ারি ১৯৭৩বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে হেইকলের সাক্ষাৎ

বাংলাদেশে সফররত কায়রোর দৈনিক আল আহরামের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি  হাসনাইন হেইকল বলেন যে, তার দেশ খুব শিগগিরই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে। ১৯৭৩ সালের এদিন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এরইমধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে কায়রো সহযোগিতা করছে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত বাণিজ্য চুক্তির কথা উল্লেখ করে সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রীর (বঙ্গবন্ধু) সঙ্গে তার আলোচনাকে সন্তোষজনক বলে তিনি মনে করেন। মধ্যপ্রাচ্য প্রশ্নে বাংলাদেশের ভূমিকায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে হেইকল জানান, মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার আশু সমাধান সম্ভব না। তিনি বঙ্গবন্ধুকে কোরআন ও আল্লাহর নাম খোদিত একটি পদক উপহার দেন।

২৭ জানুয়ারি সকালের দিকে তার প্রতিনিধিদলের সদস্যরা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের অবস্থা সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।

জানা গেছে, তথ্যমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গেও প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে। বাণিজ্য চুক্তিকে দুই দেশের জনগণের ভালো সম্পর্কের নিদর্শন বলে বর্ণনা করে। প্রতিনিধি দল আশা প্রকাশ করে যে, এই সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। তথ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে পাকবাহিনীর নৃশংস অত্যাচারের কাহিনি বর্ণনা করেন এবং শিগগিরই বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে বলে জানান। পরে প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশে গণহত্যা সম্পর্কিত একটি চলচ্চিত্র দেখানো হয়। সেই দৃশ্য দেখে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা শিহরিত হয়ে ওঠেন।

দৈনিক বাংলা, ২৮ জানুয়রি ১৯৭৩ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছাত্র ইউনিয়ন নেতাদের সাক্ষাৎ

এদিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা সাম্প্রতিক ঘটনাবলি, শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া এবং দেশের অন্যান্য পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন।

দলীয় মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড এদিন দলীয় প্রার্থীদের আবেদনপত্র চূড়ান্তভাবে পরীক্ষা করার কাজে হাত দেয়। চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়নে প্রত্যেক দিন দলের সংসদীয় বোর্ড বৈঠকে মিলিত হবে এবং সকল আসনে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত বৈঠক করবে।

দৈনিক বাংলা, ২৮ জানুয়ারি ১৯৭৩নবীন ও প্রবীণের সন্তোষজনক সমাবেশ থাকবে

আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা ৩১ জানুয়ারি ঘোষণা হওয়ার কথা। আওয়ামী লীগের সম্পাদক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘দলীয় প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করার জন্য আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক বসছে। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘একদিন আগে চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত রাখা হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দলীয় প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা অনুমোদন দেবেন।’ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভের জন্য কী কী যোগ্যতা প্রয়োজন, সে সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রার্থীকে তার এলাকায় জনপ্রিয় হতে হবে। তাকে সৎ ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হতে হবে। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে তার অবদান থাকতে হবে। দেশ সেবার মনোভাব ও আগ্রহের বিষয় বিবেচনা করা হবে।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দলীয় প্রার্থীদের অধিকাংশ নিতে হবে আওয়ামী লীগ থেকে, যারা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে যাদের অবদান আছে।’ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নবীনদের নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে জিল্লুর রহমান বলেন, ‘চূড়ান্ত তালিকায় প্রবীণ ও নবীনদের সন্তোষজনক সহাবস্থান থাকবে।’