কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রথমবার্ষিকী, দুটি দেশকে বঙ্গবন্ধুর বার্তা

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২৮ জানুয়ারির ঘটনা।)

কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রথমবার্ষিকী উপলক্ষে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব জার্মানির পাঠানো বার্তার জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ভবিষ্যতে এই দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। আর বাংলাদেশ-সোভিয়েতের মধ্যকার দীর্ঘতম সম্পর্ক এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক হবে। ১৯৭৩ সালের ২৯ জানুয়ারির পত্রিকায় এ খবর প্রকাশিত হয়।

সোভিয়েতের প্রতি

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আশা প্রকাশ করেন, সার্বভৌমত্বের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হলে তা উপমহাদেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার পক্ষে দারুণ সহায়ক হবে। তাতে এ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রথমবার্ষিকী উপলক্ষে সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো এক অভিনন্দন বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার এই ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেন। বাসসের খবরে এ কথা উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও উন্নয়নের কাজে সাহায্য ও সহযোগিতার কথা বঙ্গবন্ধু কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উল্লেখ করেন।

দৈকি ইত্তেফাক, ২৯ জানুয়ারি ১৯৭৩পূর্ব জার্মানির প্রতি

পূর্ব জার্মানির সরকার প্রধান তার অভিনন্দন বার্তায় দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রথমবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন জানান। ভবিষ্যতে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আগামীতে এ সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।’ এর জবাবে বঙ্গবন্ধু পূর্ব জার্মানির প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি অভিনন্দন বার্তা পাঠান। অভিনন্দন জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাংলাদেশ ও জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের মধ্যে সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও মজবুত হবে।’

হেইকলের বক্তব্য

বাংলাদেশের মুক্তি-সংগ্রাম সম্পর্কে কায়রোর প্রভাবশালী দৈনিক আল আহরামের সম্পাদকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান হাসনাইন হেইকল তার বোঝাপড়া নিয়ে এদিন কথা বলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার অনন্য বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতিহাসে মুক্তির সংগ্রামী দেশের দৃষ্টান্তের অভাব নেই। কিন্তু এমন সমন্বিত বিপ্লবের দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, বাংলাদেশ মনেপ্রাণে সমন্বিত বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে।’

যুদ্ধবিরতি, তবু সংঘর্ষ

সরকারিভাবে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও দক্ষিণ ভিয়েতনামের সর্বোচ্চ বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ অব্যাহত ছিল এই দিনেও। মার্কিন সূত্রে বলা হয় যে আগামী কয়েকদিন সংঘর্ষ আরও তীব্রতর হবে বলে তারা আশঙ্কা করছে। এদিকে ভিয়েতনাম থেকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবশিষ্ট ২৩ হাজার সৈন্য অপসারণের কাজ শুরু করেছে। অপরদিকে আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সদস্যরা এসে পৌঁছেছেন। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের জন্য প্রতিনিধিরাও পৌঁছেছেন। প্রতিনিধিরা যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ ভিয়েতনামে ‘যুক্ত সামরিক কমিশনের’ সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠকে যোগদান করবেন। যুক্ত সামরিক কমিশন বা আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার কোনও কার্যকর ক্ষমতা নেই বলে উভয় কমিশন অসুবিধার সম্মুখীন হবে বলে ধারণা করা হয়। এদিকে বিক্ষিপ্ত কিন্তু ব্যাপক সংঘর্ষে মুক্তিযোদ্ধারাই লাভবান হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। নতুন নতুন এলাকায় তারা দখল নিয়েছেন। তারা রাজধানী অভিমুখে প্রধান সড়ক বিচ্ছিন্ন করে দেন। তবে সামরিক ভাষ্যকাররা বলেন, আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ অপ্রত্যাশিত ছিল না। তারা মনে করেন, সারা দক্ষিণ ভিয়েতনামের ওপর সরকারের কর্তৃত্বে কোনও গুরুতর বিঘ্ন এখনও দেখা দেয়নি।

দৈনিক বাংলা, ২৯ জানুয়ারি ১৯৭৩নির্বাচনি কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে

আসন্ন সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরই দলের চূড়ান্ত নির্বাচনি কর্মসূচি প্রকাশ করা হবে। এই কর্মসূচি নির্বাচনি প্রচার কাজের সময় দেশবাসীর কাছে পেশ করা হবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সংসদের অন্যতম সদস্য যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে গঠিত ‘নির্বাচনি কর্মসূচি প্রণয়ন কমিটি’ এরইমধ্যে কর্মসূচি প্রণয়নের জন্য কয়েক দফা বৈঠকে মিলিত হয়েছে। কমিটি কর্মসূচির রূপরেখা প্রণয়নের কাজ সমাপ্ত করেছে বলে সংবাদে প্রকাশ করা হয়।