দেশজুড়ে তখন বইছে প্রথম নির্বাচনি হাওয়া

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারির ঘটনা।)

১৯৭৩ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আওয়ামী লীগসহ বড় দলগুলোর মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে  দেশজুড়ে নির্বাচনি হাওয়া বইতে শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেসব আসনে লড়বেন বলে ঘোষণা এসেছে, তার মধ্যে তিনটিতে প্রার্থী না দেওয়ার কথা জানায় মোজাফফর ন্যাপ। এদিন হাইকোর্ট আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক হিসেবে নৌকার বৈধতা দান করেন। একইদিনে বঙ্গবন্ধুর কাছে দলের খসড়া নির্বাচনি ঘোষণাপত্র তুলে দেওয়া হয়।

প্রথম সাধারণ নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছিল। সময়সীমা যতই ঘনিয়ে আসছিল, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রার্থী মনোনয়নের জন্য তাড়াহুড়ো পড়ে যায়। বাসস পরিবেশিত এক খবরে  বলা হয়, সরকার ও প্রার্থী বা তাদের এজেন্টদের মনোনয়নপত্র দাখিলের সুবিধার্থে এরইমধ্যে সরকারি ছুটির দিনেও সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো তথা রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের দফতরসহ সব নির্বাচনি অফিস খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা প্রমাণ হবে।

বাংলাদেশ অবজারভার, ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে তিন আসনে কোনও প্রার্থী নেই

মোজাফফর ন্যাপ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ঢাকার দুটি এবং ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ আসনে কোনও প্রার্থী মনোনয়ন না দেওয়ার ঘোষণা দেয়। ঢাকার সূত্রাপুর, গুলশান, তেজগাঁও থানার আংশিক ও গোপালগঞ্জ আসনে কোনও প্রার্থী না দিলেও বাকেরগঞ্জ অর্থাৎ বোরহান উদ্দিন নির্বাচনি এলাকায় একজনকে ন্যাপের মনোনয়ন দেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জন্য

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত বিধিগুলো যথাসম্ভব সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করে দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম পূরণ করতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রচারাভিযান সাব-কমিটির আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম আহ্বান জানান। সংবাদপত্রে দেওয়া এক বিবৃতিতে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র পূরণে সর্তকতা অবলম্বন এবং যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে তা জমা দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

দৈনিক ইত্তেফাক, ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩নৌকা আওয়ামী লীগেরই

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের একটি বেঞ্চ এদিন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের শাহজাহান সিরাজের করা আবেদনটি খারিজ করে দেন। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আওয়ামী লীগকে নির্বাচনি প্রতীক নৌকা বরাদ্দের বিষয়টি বৈধ বলে ঘোষণা করে। জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক বরাদ্দের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সংবিধানের ১০২ ধারা মোতাবেক রিট আবেদন দাখিল করেছিলেন। আবেদনটি দুই দিনে ৬ ঘণ্টা শুনানির পর খারিজ করে দেওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধুর কাছে দলের খসড়া নির্বাচনি ঘোষণাপত্র

এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে আওয়ামী লীগের খসড়া নির্বাচনি ঘোষণাপত্র পেশ করা হয়। আওয়ামী লীগের ‘ঘোষণাপত্র কমিটি’ বঙ্গবন্ধুর কাছে দলের নির্বাচনি ঘোষণাপত্র পেশ করে। বঙ্গবন্ধু দলের এই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে কিছু পরামর্শ দেন। তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় সংশোধনের পর ঘোষণাপত্রটি আবারও বঙ্গবন্ধুর কাছে পেশ করা হবে এবং তা অনুমোদনের পর সেটি প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনসহ অনেকে।

দৈনিক বাংলা, ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩

বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনি প্রচারণা  শুরু

এরইমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনি বক্তব্য দিতে শুরু করেছেন মনোনয়নপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা। মন্ত্রী মতিউর রহমান বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করবে।’ ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি ভেড়ামারা হাইস্কুল প্রাঙ্গণে এক জনসভায় বক্তৃতা করছিলেন। অতীতের মতো এবারের নির্বাচনেও জনগণকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একাত্মতা জানাতে বলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সম্মিলিত সংগ্রামের ফলেই ইয়াহিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আমরা জয়ী হতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কখনোই ক্ষমতার রাজনীতিতে বিশ্বাস করেনি। এর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল এমন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যে সমাজে সবারই গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা থাকবে।’  গুপ্তহত্যার কথা উল্লেখ করে মতিউর রহমান বলেন, ‘রাজাকার ও আলবদরই এগুলো করছে।’