বঙ্গবন্ধুসহ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের ৬ আসন লাভ

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির ঘটনা।)

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের তখনও ২৮ দিন বাকি। জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য এদিন মনোনয়নপত্র দাখিলের নির্ধারিত দিন ছিল। দশটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ১২শ’ মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাকেরগঞ্জ-৪ ও ফরিদপুর-১১ নির্বাচনি এলাকা থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন বলে প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।

এ ছাড়া মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য সোহরাব হোসেন যশোর-১১, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব ও ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ বাকেরগঞ্জ-১, সাবেক এমসিএ ও আওয়ামী লীগের সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান ফরিদপুর-৭ ও বাকেরগঞ্জ-৩ থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. তাজউদ্দীন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

ভোলা নির্বাচনি এলাকায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ঢাকা আওয়ামী লীগের কর্মীসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোক এইদিনে গণভবনে যান। তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। উপস্থিত জনসাধারণ বঙ্গবন্ধুকে বিপুলভাবে মাল্যভূষিত করে। বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা শহরে তাদের নির্বাচনি এলাকা থেকে প্রার্থী হওয়ায় তারা তাকে কৃতজ্ঞতা জানান।

দেশি বিচারক নিয়ে আদালত

বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন বলেন, পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য শুধু বাংলাদেশের বিচারকদের সমন্বয়ে আদালত গঠিত হবে। তিনি আরও বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে বিচারের প্রাথমিক কাজ অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে তদন্তকাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।

তবে পাকিস্তানের যুদ্ধবন্দিদের মধ্যে কতজনকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের আওতায় আনা হবে সে ব্যাপারে সরকার এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, পাকিস্তানের যুদ্ধবন্দিদের কেউ কেউ তাদের অপরাধ সম্পর্কে ভারতীয় সামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে বিবৃতি দিয়েছে।

নয়াদিল্লিতে জাতিসংঘ মহাসচিব ওয়ার্ল্ড হেইমের সঙ্গে আলোচনা করেন আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন। ‘এক এশিয়া সম্মেলনে’ যোগদানের উদ্দেশে তিনি নয়াদিল্লিতে যান। সেখানে সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণ দেন ওয়ার্ল্ড হেইম। আলোচনাকালে ড. কামাল হোসেন মহাসচিবকে বলেন, উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা দেখবার জন্য বাংলাদেশ খুবই আগ্রহী এবং একইসাথে বাংলাদেশ চায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিবাদের প্রধান সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান হোক। এই বক্তব্যের বিপরীতে সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশসহ প্রধান তিনটি দেশের মধ্যে বিরাজমান সমস্যা সমাধানে তিনি সম্ভাব্য সব চেষ্টা করবেন।

নির্বাচনি জনসংযোগ শুরু করবেন বঙ্গবন্ধু

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা নির্বাচনি সফর শুরু করতে যাচ্ছেন। ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, সিলেট, কুমিল্লা জেলায় ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করবেন বলে জানানো হয়। এই সময়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন জনসভায় ভাষণ দেবেন বঙ্গবন্ধু। বার্তা সংস্থা বাসসের খবরে বলা হয়, সফরসূচি অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু ১২ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল যাবেন। ঐদিন সকাল দশটায় টাঙ্গাইলে, দুপুর বারোটায় জামালপুরে এবং বিকেলে ময়মনসিংহে জনসভায় বক্তৃতা করবেন তিনি।