২০১৭ সালের আগস্টে পরিবার নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন সৈয়দ আলম। মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অত্যাচারের মুখে ঘর ছাড়তে বাধ্য হন তারা। বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেন কক্সবাজারের বালুখালি ক্যাম্পে। সেখান থেকে ৪ ডিসেম্বর রোহিঙ্গাদের প্রথম ব্যাচে ভাই ও পরিবারসহ ভাসানচরে চলে আসেন তিনি। কিন্তু এখানে তিনি বসে থাকেননি। দুই সপ্তাহ আগে খুলেছেন একটি হোটেল যেখানে ছোলা, সিঙ্গাড়া, চা, পরোটাসহ অন্যান্য খাবার বিক্রি করছেন। প্রতিদিন বিক্রি কতো জানতে চাইলে বলেন, ১৮শ’ থেকে দুই হাজার টাকা। বিক্রিবাট্টা থেকে একটি ভালো লাভ থাকে প্রতিদিন।
মকতুল হোসেনও প্রায় একই সময়ে পালিয়ে আসেন মিয়ানমার থেকে। ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি মিলিয়ে ১৭ জনের সংসার। প্রথম ধাপে তিনি এবং তার স্ত্রী ভাসানচরে এসেছেন। বাকিরা আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আশা করা হচ্ছে, সামনের সপ্তাহে রোহিঙ্গাদের যে দলটি ভাসানচরে আসবে, সেখানে তারা থাকবেন।
ভাসানচরে বর্তমানে প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গার অধিকাংশের শারীরিক ভাষা দেখে মনে হয় তারা ভালো আছেন। এ বিষয়ে আশ্রয়ন প্রকল্প-৩ (ভাসানচর প্রকল্প) এর পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বলেন, প্রথম ব্যাচে ১৬৪২ জন এসেছে গত ৪ ডিসেম্বর। বর্তমানে এখানে সাত হাজারের মতো রোহিঙ্গা আছে। আগামী সপ্তাহে আরও কয়েক হাজার রোহিঙ্গা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘যারা আসছে তাদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি। বিশেষ করে চার থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। এখানে যে স্থাপনা এবং অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা আছে এ ধরনের সুবিধার কথা শুনে অনেকে আসছে। আমি সম্প্রতি ট্রিপল আরসির (শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার) সঙ্গে বৈঠক করেছি। তিনি জানিয়েছেন অনেকে আসতে চাইছে। আমার ধারণা, আমাদের যে স্থাপনা ও সুবিধাগুলো আছে সেগুলোর জন্য তারা অনেক ভালো আছে।’
কয়েকটি এনজিও ও বাংলাদেশ রুরাল ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিআরডিবি) এর উদ্যোগে এখন পাইলট ভিত্তিতে রোহিঙ্গারা মুরগি পালন, সবজি চাষসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। পর্যায়ক্রমে তারা বড় স্কেলে যাচ্ছে। এছাড়া বিআরডিবি এখানে একটি প্রকল্প উদ্বোধন করেছে যার অধীনে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য তিন থেকে চারটি লার্নিং সেন্টারে মিয়ানমার ও ইংরেজি ভাষা অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়েছে এবং এনজিওরা এগুলো চালাচ্ছে বলে তিনি জানান।
কক্সবাজারে ছয় হাজার ৫০০ একর জায়গায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস। কিন্তু ভাসানচরে এক হাজার ৭০০ একর জায়গায় এক লাখ রোহিঙ্গার বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ১৯ ফুট উঁচু বাধ দিচ্ছি। বাঁধের মধ্যে যে জায়গা আছে সেখানে নতুন স্থাপনা তৈরি করা হলে আরও দুই লাখ রোহিঙ্গা আনা সম্ভব।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কক্সবাজারে যেভাবে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে সেভাবেই এখানে দেওয়া হচ্ছে। এরা যদি বিভিন্ন পেশাভিত্তিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয় তাহলে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়বে না।