শিক্ষা ব্যবস্থা আমূল পাল্টে ফেলা হবে

আগামী চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা আমূল পাল্টে ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।  বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশে কর্মরত ১৫টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা’র 'নিরাপদ ইশকুলে ফিরি’ শীর্ষক ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা জানান।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সনদসর্বস্ব পরীক্ষানির্ভর পদ্ধতি বদলাতে হবে। আমাদের মাইন্ডসেটও বদলাতে হবে। আনন্দময় শিক্ষার কথা আমি বলেছি। আমরা কী শিখলাম, কতটা শিখলাম সেটা মূল্যায়নের বদলে আমরা জুজু বানিয়ে ফেলেছি। সেজন্য আমরা ধারাবাহিক মূল্যায়নে যাচ্ছি। জিপিএ-৫ তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। সেটা করতে হবে।’

দেশের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর পরিসংখ্যান তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষকের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৪৩০। পৃথিবীর অনেক দেশ আছে তাদের পুরো জনসংখ্যা এর চেয়ে কম। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী এক কোটি ৫ লাখ। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ১৫ হাজার ৫২৪ জন, আর শিক্ষার্থী ৪০ লাখ ৮৫ হাজার ২৯১। পৃথিবীর খুব কম দেশ পাওয়া যাবে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রায় ৪ মিলিয়ন শিক্ষার্থী। আমাদের এই সংখ্যাগুলো মাথায় রেখে বিবেচনা করা দরকার। মাঝে মাঝে রিসার্চের কথা যখন শুনি তখন স্যাম্পল নিয়ে আমার জানতে ইচ্ছে করে।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে, এখন খুলবো। তাহলে খুললেই কী হবে? বিল্ডিং ব্যাক বেটার! আগে যা ছিল তার চেয়ে কীভাবে ভালো করবো তা তো ভাবতেই হবে। কোভিড-১৯ আমাদের সুযোগ করে দিয়েছে আমাদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে, হাইজিনের ব্যাপারে এবং কী কী সুযোগ-সুবিধা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আছে তার বিষয়ে ভাবতে।’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সামাজিক দূরত্বের বিষয় উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সামাজিক দূরত্বের কথা বলছি। আমাদের একটা বিরাট সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে শিক্ষার্থীদের গায়ে গায়ে লেগে বসতে হয়। তাহলে সামাজিক দূরত্ব কীভাবে হবে? গায়ে গায়ে লেগে বসলে আমাদের বন্ধুত্ব বেড়ে যাচ্ছে তা কিন্তু নয়। আমরা বলি শেয়ার করা ভালো, কিন্তু রোগ শেয়ার করা ভালো নয়। ওটা তো বন্ধুত্ব হলো না। আমাদের আইডিয়াল ক্লাসরুম সাইজ বলা হয় ৪০ জন বা তার নিচে শিক্ষার্থীর হিসেবে। ওপরে নয়। কিন্তু আমাদের দেশের সবচেয়ে স্বনামধন্য কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণের কাছাকাছি। তাহলে আমাদের জন্য এটি নিয়ে কি এখনি ভাবার সুযোগ নয়? এখন একটা সুযোগ পেয়েছি ঠিক করা যায় কিনা। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিকে কাজে লাগানো দরকার। আমরা কী পড়ছি, কী পড়াচ্ছি, কেন পড়াচ্ছি, কীভাবে পড়াচ্ছি—এসব ভাবতেই হবে।’

শিক্ষা ব্যবস্থা আমূল পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লব যেমন আছে, সেইটা অর্জনে আমাদের জন্য সময়টা খুব ছোট। ১০ থেকে ১১ বছর। এই সময়ের মধ্যে যদি এটা ঠিক করতে হয় তাহলে তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে শিক্ষা ব্যবস্থাকে আমূল পাল্টে ফেলতে হবে। সেটা (চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কাজে লাগানো) যদি না করতে পারি, তাহলে চিরকালের জন্য তা হারিয়ে যাবে, ফিরে পাওয়া যাবে না।’

ধারাবাহিক মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘জিপিএ-৫-এর জন্য আমরা জুজু বানিয়ে ফেলেছি। সেজন্য আমরা ধারাবাহিক মূল্যায়নে যাচ্ছি। ২০১৯ সালে আমরা পাইলট করেছি। তার ফলাফলে আমরা খুশি। ধারাবাহিক মূল্যায়ন বাড়িয়ে দেওয়া, মূল্যায়ন নিয়ে গবেষণা করা, এগুলো নিয়ে আমরা একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে যাচ্ছি।  জিপিএ-৫ তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। সেটা করতে হবে। সনদসর্বস্ব পরীক্ষানির্ভর পদ্ধতি বদলাতে হবে। আমাদের মাইন্ডসেট বদলাতে হবে। আমরা সফট স্কিলের কথা বলছি, সোশ্যাল-ইমোশনাল স্কিলের কথা বলছি এবং কমিউনিটি এনগেজমেন্টের কথা বলছি।  এক্সপেরিয়েন্স লার্নিংয়ের কথা বলছি।’