২৫ মার্চ রাতেই বার্তা পাঠিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ঘটনা।)

২৫ মার্চের সেই রাতে শত্রুর হাতে আটক হওয়ার আগমুহূর্তে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। জনগণকে শত্রুর মোকাবেলা করে স্বাধীনতা অর্জনের আহ্বানও জানিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম বিডিআর ক্যাম্পে তিনি তাঁর বাণী দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন।

জনগণ খালি হাতেই স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ভাষণে বলেন, দুষ্কৃতিকারী দমনে বর্তমানে নিয়োজিত রক্ষীবাহিনীকে তাদের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা যাবে না। কেননা, বাংলাদেশের জনগণ শান্তি চায়। দুষ্কৃতিকারীদের সুযোগ দেওয়ার জন্য ত্রিশ লাখ লোক জান দেয়নি।

গণসংযোগ সফরের দ্বিতীয় পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এবং পটিয়ায় একটি বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন। ১৯৭৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পত্রিকায় তার সারাংশ প্রকাশ করা হয়।

১০ লক্ষাধিক মানুষের নৌকায় ভোট দেওয়ার শপথ

এসব জনসভায় বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে দশ লক্ষাধিক মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর আহবানে জনগণ দেশ থেকে সমস্ত শত্রুভাবাপন্ন নির্বাচনবিরোধী শক্তিকে নির্মূল করার সংকল্পও প্রকাশ করে। চট্টগ্রামে বিকেলে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টকে তার নিজের দেশ নিয়ে ভাবতে এবং বাংলাদেশ নিয়ে খেলা না করতে হুঁশিয়ার করে দেন।

একদিনে ছাব্বিশ জনসভায় বক্তৃতা

বিকেলে স্থানীয় পলোগ্রাউন্ডে এক বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান তার ভাষণ শেষ করতে চাইলে স্থানীয় ছাত্রলীগের একদল সদস্য আরও বক্তৃতা করতে তাকে অনুরোধ জানান। উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন, যৌবনে একই দিনে ২৬টি জনসভায় বক্তৃতা করেছেন। কিন্তু এখন বয়স হওয়ায় তিনি ক্লান্ত। স্মরণ করিয়ে দেন যে আজ একই দিনে তাকে কক্সবাজার, পটিয়া ও চট্টগ্রামে মোট তিনটি জায়গায় বক্তৃতা করতে হয়েছে।

চীনের প্রতি বঙ্গবন্ধু

জাতিসংঘে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চীনের অবস্থান নেওয়ায় দুঃখপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এশিয়ার বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশকে কিভাবে ভেটো দিতে পারে তাতে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, চীনকে ২২ বছর ধরে জাতিসংঘের সদস্যপদ থেকে বঞ্চিত রাখা সত্ত্বেও দেশটি স্বাধীন ছিল। বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সদস্যপদ দেওয়া না হলেও কেউ বাংলাদেশের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে পারবে না।

বাঙালিদের যারা হত্যা করেছিল সেই পাকিস্তানি বাহিনীকে চীন অস্ত্র সরবরাহ করেছিল উল্লেখ করেও বঙ্গবন্ধু দুঃখপ্রকাশ করেন। তিনি এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, ১৯৭০ সালের মার্চের অসহযোগ আন্দোলনের সময় অস্ত্র বোঝাই জাহাজ চট্টগ্রাম পৌঁছেছিল। জনগণ ২৪ মার্চ পর্যন্ত সেইসব অস্ত্র নামাতে দেয়নি।

দেশবাসীর দায়িত্ব ও কর্তব্য স্মরণ করালেন বঙ্গবন্ধু

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণসংযোগ সফরের দ্বিতীয় পর্যায়ে পটিয়ার জনসভায় ভাষণদানকালে আসন্ন নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশবাসীর দায়িত্ব ও কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দেন। দেশের স্বাধীনতা বানচালের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় অবিচল থেকে ভোটের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকারের সদ্ব্যবহার করার এবং সমাজবিরোধীদের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জাতীয় মূলনীতির ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতার অপব্যবহারের কোনও অবকাশ নেই। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। তবে অতীতের মতো ধর্মকে নিয়ে রাজনীতির খেলা খেলতে দেওয়া হবে না। বাংলার মাটিতে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে একথা ঘোষণা করে তিনি বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে চলতি বছর সবচেয়ে বেশি ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে হজে পাঠানো হয়েছে।

কিছু লোকের চরিত্র বদলায়নি

বঙ্গবন্ধু দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, এত কিছুর পরও কিছু লোকের চরিত্র বদলায়নি। এসব লোভী লোকজন গরিবের ত্রাণে ভাগ বসাচ্ছে। কিছু লোকের হাতে অস্ত্র রয়েছে এবং তারা নিরীহ লোকদের শান্তিতে ঘুমাতে দিচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের তারিখ থেকে যারা নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে কাজ করছে তাদের প্রত্যেককে শাস্তি দেওয়া হবে।

বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, প্রত্যেকেরই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এবং জনসাধারণের কাছে ভোট চাওয়ার স্বাধীনতা আছে। তা সত্ত্বেও কিছু লোক জনসাধারণ ভোট দেবে না বুঝতে পেরে নির্বাচন থেকে পিছু হটার নানা অজুহাত সৃষ্টির চেষ্টা করছে।