শহীদের আত্মাহুতি বৃথা যেতে না দেওয়ার শপথ বঙ্গবন্ধুর

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনা।)

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অমর একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত এক বাণীতে বলেন, রক্তে রাঙানো এই দিন বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। আজকের এই দিন জাতির আত্মশুদ্ধির দিন। শহীদদের আত্মাহুতি বৃথা যেতে দেওয়া হবে না- আজকের দিনে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

বঙ্গবন্ধু তার বাণীতে আরও বলেন, মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে বাংলা মায়ের সন্তান সালাম, বরকত, জব্বার ও আরও অনেকে যে মহান আত্মত্যাগ এর আদর্শ রেখে গেছেন জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে। রক্তে রাঙানো এই দিন বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। রক্তের আখরে বায়ান্ন সালে যে জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল ত্যাগ ও সংগ্রামের রক্তরাঙা পিচ্ছিল পথে ধাপে ধাপে এগিয়ে ১৯৭১ সালে বাঙালি আবার রক্ত দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করলো তাদের স্বাধীন সত্তাকে। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাংলা তার রাষ্ট্রভাষা। জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার গৌরবময় ঐতিহ্য অধিকারী বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতির শিক্ষা শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে অনন্ত সম্ভাবনাময় সমুজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে- এই হোক আমাদের কামনা।

তিনি বলেন, আজকের এই দিন জাতির আত্মশুদ্ধির দিন। শহীদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেবো না আজকের দিনে এই হবে আমাদের অঙ্গীকার। প্রতিবছর অমর একুশে জনগণের সংগ্রামী চেতনায় উজ্জীবিত করে তুলুক। উদ্বুদ্ধ করে তুলুক নতুন নবসৃষ্টির অমর শহীদ স্মৃতি। জয় বাংলা।

ইংরেজির দৌরাত্ম্য আজও কমেনি

যেমন আশা করা হয়েছিল গত ১৪ মাসের সরকারি পর্যায়ে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন তেমন হয়নি। ১৯৭৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এক বিশেষ প্রতিবেদনে দৈনিক বাংলা এ দাবি করে। এ ব্যাপারে সরকারের অকৃত্রিম আন্তরিকতা থাকলেও এ সময়ের মধ্যে কোনও সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসেনি। ফলে এখনো সরকারি পর্যায়ে ইংরেজি ভাষার প্রাধান্য উপনিবেশ যুগের মতোই। তবে অফিস-আদালতে বাংলা সামান্য ব্যবহার হচ্ছিলো। তাতে রয়েছে সমন্বয়ের অভাব। এছাড়া বাংলা ভাষা চালুর ব্যাপারে দারুণ অসুবিধার কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে পরিভাষা, বাংলা টাইপরাইটার, টাইপিস্টদের স্বল্পতা। সবমিলিয়ে সেসময় সামান্য পরিমাণ বেশি টাইপ রাইটার থাকলে বাংলা প্রচলন দ্রুত হতো বলে খবরে বলা হয়।

একুশে জাতীয় চেতনার উন্মেষ লগ্ন

রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী মহান একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে প্রদত্ত বাণীতে এ দিনটিকে বাঙালি জাতির চেতনার উন্মেষ লগ্ন বলে অভিহিত করেন। বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি তথা জাতীয় অস্তিত্বের উপর উপনিবেশবাদের হামলা প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে তারা সেদিন সংগ্রামে শরিক হয়েছিলেন। অকাতরে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে জীবনের চরম ত্যাগে নিজেদেরকে মহীয়ান করে তুলেছিলেন। এই পুণ্য লগ্নে রাষ্ট্রপতি শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন তাঁরা ছিলেন স্বাধিকার সংগ্রামের পথ নির্দেশক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। রাষ্ট্রপতি বলেন, তার সুদীর্ঘ ২০ বছর জাতি তাদের প্রদর্শিত ত্যাগ ও সংগ্রামের পথে অগ্রসর হয়েছে।