সীমান্তে প্রতিটি হত্যাকাণ্ড দুঃখজনক: জয়শঙ্কর

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান ও সমস্যার বাস্তব সমাধানে কাজ করার কথা বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে হত্যাকাণ্ড ভারতের মধ্যে সংঘটিত হয়ে থাকে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা একমত হয়েছি যে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডই দুঃখজনক। কিন্তু আমরা নিজেদের প্রশ্ন করেছি, সমস্যার মূল কারণ কি এবং এটি হচ্ছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।’

তিনি বলেন, আমাদের দু’পক্ষের লক্ষ্য হওয়া উচিত অপরাধবিহীন সীমান্ত, যাতে হত্যাকাণ্ড না হয়। আমার ধারণা আমরা দু’পক্ষ এই সমস্যার সমাধান করতে পারবো।

বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) সকালে ঢাকা পৌঁছানোর পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

কানেক্টিভিটি
দুই দেশের সম্পর্ক ৫০ বছর পার হয়ে গেছে এবং সামনের দিনগুলোতে সম্পর্ক কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমন কোনও ক্ষেত্র নেই, যেখানে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি না। যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন ৫০ বছর পার হয়ে গেছে এবং পরের ২০ বছর কি করা যেতে পারে। আমি বলবো কনেক্টিভিটি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘কানেক্টিভিটি হচ্ছে উৎপাদনশীলতা। যদি আমরা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কানেক্টিভিটি ঠিক রাখতে পারি, তবে এই অঞ্চলের সামগ্রিক ভূ-অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসবে। এক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগর খুব কার্যকর। আমরা দুই পক্ষই বিশ্বাস করি এটি করা সম্ভব।’

দুই মন্ত্রীর মধ্যে বড় একটি সময়ে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তৃতীয় পক্ষকে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার বিষয়েও আমরা আলোচনা করেছি। সম্ভাব্য দেশ হিসেবে জাপানের নাম এসেছে। কারণ, ওই দেশের সঙ্গে আমাদের দুই দেশেরই সম্পর্ক যথেষ্ট ভালো। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে জাপানের সংযুক্তি প্রকল্প রয়েছে। সম্পর্কোন্নয়নে আমি কানেক্টিভিটিকে বড় লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করি।’

এছাড়া মানুষে-মানুষে যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দিন শেষে দুই দেশের সম্পর্ক মানেই আমাদের জনগণের সম্পর্ক। আমাদের উচিত মানুষ-কেন্দ্রিক সম্পর্ক। আমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাজনীতিকে প্রাধান্য দেই এবং এটি সম্পর্ককে নতুন মাত্রা ও গতি দেয়, যোগ করেন তিনি।

অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন নিয়ে জানতে চাইলে সংক্ষিপ্ত উত্তরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পানি নিয়ে ভারত সরকারের অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হয়নি। এটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই পানি সচিব পর্যায়ে বৈঠক হবে।

ফাইল ছবিমোদির সফর
সফরের অনেক উদ্দেশ্য রয়েছে উল্লেখ করে জয়শঙ্কর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর উপলক্ষে আমি এসেছি। কোভিড শুরু হওয়ার পর, এটি হবে তার প্রথম বিদেশ সফর এবং বাংলাদেশে দ্বিতীয়।’

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক রূপান্তর হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি এবং যে বিষয়গুলো অমীমাংসিত রয়েছে, সেগুলো নিয়েও কথা হয়েছে। সম্প্রতি আমাদের মধ্যে যে অগ্রগতি হয়েছে, তারও পর্যালোচনা করেছি।’

আমার কাছে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অর্থনৈতিক, কানেক্টিভিটি ও মানুষে মানুষে যোগাযোগের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

বৈঠক বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে মূল আলোচনা হয়েছে। সফরের সময়ে বঙ্গবন্ধু-বাপু জাদুঘর উদ্বোধন করা হবে।

এ সময় ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে মোমেন বলেন, এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।

দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে আগামী ২৬ মার্চ ঢাকা আসার কথা আছে নরেন্দ্র মোদির।

আরও পড়ুন:
গোপালগঞ্জ ও বরিশাল সফর করতে পারেন নরেন্দ্র মোদি
কেন গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দি যেতে চান মোদি?
মোদির সফর চূড়ান্ত করতে ঢাকা আসছেন জয়শঙ্কর