নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন, গণভবনে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৫ মার্চের ঘটনা।)

৭ মার্চ স্বাধীন বাংলার প্রথম নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হতে পারে, সেজন্য সরকার সেনাবাহিনীকে সতর্ক করে রেখেছে এবং কয়েক দিন আগেই সারা দেশে বাংলাদেশ রাইফেলস, রক্ষীবাহিনী, পুলিশ ও আনসার মোতায়েন করা হয়। ১৯৭৩ সালের এই দিনে নির্বাচনের একদিন আগে বার্তা সংস্থা এনা এ খবর দেয়। স্বরাষ্ট্র দফতরের উচ্চপদস্থ মহল থেকে বলা হয়, সব জেলা ও মহানগর এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

সাধারণভাবে পুলিশ ও আনসার ভোটকেন্দ্রে থাকবে। তবে দরকার হলে রক্ষী বাহিনী তলব করা হবে। এই উদ্দেশ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার জন্য গণভবনে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ বসানো হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ রাইফেলস ও রক্ষীবাহিনী থাকবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট থানা কেন্দ্রে পুলিশ, বাংলাদেশ রাইফেলস ও রক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

দৈনিক ইত্তেফাক, ৬ মার্চ ১৯৭৩

হাসপাতালে দ্বিতীয়বারের মতো ভাসানীকে দেখতে যান বঙ্গবন্ধু

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে দেখতে গিয়েছিলেন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন ইনস্টিটিউট অব পোস্ট  গ্র্যাজুয়েট মেডিসিনের ডা. নুরুল ইসলাম। অসুস্থ মওলানা ভাসানীর সামনে বঙ্গবন্ধু ৩০ মিনিট ছিলেন। মওলানা ভাসানীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেন। বঙ্গবন্ধু ভাসানীর পত্নীর সঙ্গেও কথা বলেন বলে এনা’র খবর উল্লেখ করা হয়। অসুস্থ মওলানা সাহেবের সেবা-শুশ্রূষার জন্য তার পত্নী কয়েক দিন আগে ঢাকায় আসেন। পরে ডা. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘মওলানা ভাসানীর স্বাস্থ্যের সন্তোষজনক উন্নতি হয়েছে। তার শরীরের তাপমাত্রা কমেছে।’ তবে ডা. নুরুল ইসলাম ভাসানীকে আরও কিছু দিন বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেন। বাসসের খবরে বলা হয়, মওলানা ভাসানীর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময় বঙ্গবন্ধু তাকে এই আশ্বাস দিয়েছেন যে, চিন্তার কোনও কারণ নেই। মওলানা ভাসানীর জন্য উপযুক্ত চিকিৎসার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ভাসানীর স্ত্রী এর উত্তরে বলেন, ‘আমি আপনার জন্য দোয়া করি।’

বাংলাদেশ অবজারভার, ৬ মার্চ ১৯৭৩

প্রকাশ্যে প্রচার অভিযান সমাপ্ত

প্রকাশ্যে নির্বাচনি প্রচার অভিযান সমাপ্ত হয় এই দিনে। মধ্যরাতে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনি লড়াইয়ে প্রচার অভিযানের শেষ পর্ব সমাপ্ত করেন। এদিন রাজধানীর মনিপুর এলাকা ছিল নির্বাচনি প্রচারণায় মুখর। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থনে বাস-ট্রাকের একটি দীর্ঘ মিছিল সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত মিরপুর-মোহাম্মদপুরসহ শহরের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে। লালবাগ এলাকার স্বতন্ত্র প্রার্থী এনায়েত উল্লা খানের সমর্থনে চকবাজার-লালবাগ-নিউ মার্কেট-শান্তিনগরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রচারাভিযানে ভিন্নতা আনতে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের কর্মীরা ভোটার কার্ড নিয়ে ছড়িয়ে পড়েন পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় ও ঘরে ঘরে। অপরদিকে এই অভিযান ক্রমশ বাড়তে থাকে। অধিকাংশ ভোটারই প্রার্থীদের প্রতীকসহ ভোটার কার্ড পেয়ে যান ঘরে বসেই। তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে ব্যাপক গণসংযোগ শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদিন ঢাকাতে অবস্থান করেন।

দৈনিক ইত্তেফাক, ৬ মার্চ ১৯৭৩

দালাল শিক্ষকদের সম্পর্কে ডাকসু

পাকবাহিনীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করার অভিযোগে কারারুদ্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের বিষয়ে সরকারি ভূমিকার সমালোচনা করে বিবৃতি দেন ডাকসুর নেতারা। বিবৃতিতে তারা বলেন, শিক্ষকদের যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও শিক্ষকতা করার সুযোগ দেওয়া হয়, তবে ছাত্রসমাজ তা রুখে দাঁড়াবে। তারা আরও বলেন, ১৯৭২ সালের জানুয়ারির মধ্যে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করতে আসেননি, তাদের আর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে এ বিষয়টি নিষ্পত্তির দাবি করেন। ডাকসুর ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুব জামান বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন।