মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হবে বিজয়ের দিনে

রাজধানীতে নির্মিতব্য মেট্রোরেলের প্রথম সেট বহনকারী জাহাজ গত ৪ মার্চ জাপানের কোবে বন্দর থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে। আগামী ২৩ এপ্রিল ঢাকায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে জাহাজটির। সবকিছু ঠিক থাকলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন বর্ষের ১৬ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে প্রকল্পের কাজ।

এ পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

মঙ্গলবার (৯ মার্চ) শতভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) মেট্রোরেলের সবশেষ অগ্রগতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার যানজট নিরসন ও নগরবাসীর যাতায়াত আরামদায়ক, দ্রুততর ও নির্বিঘ্ন করতে ২০১২ সালে গৃহীত হয় মেট্রোরেল প্রকল্প। প্রতিদিন ২৪ সেট রেলগাড়ি চলাচল করবে। প্রত্যেকটি রেলে থাকবে ছয়টি করে কার। যাত্রী নিয়ে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ছুটবে এই রেলগাড়ি। উভয় দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহনে সক্ষমতা থাকবে মেট্রোরেলের। এ প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বাকিটা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থায়ন করা হবে।

ডিএমটিসিএল জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ডিপোর অভ্যন্তরে ছয় কিলোমিটার ওভারহেড ক্যাটেনারি সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮১ দশমিক ৪২ শতাংশ, দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৫৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। এছাড়াও ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি হয়েছে ৪৯ শতাংশ।

সম্প্রতি ডিএমটিসিএলের আওতায় বাস্তবায়নাধীন এমআরটি লাইন-৬-এ কর্মরত ছয় জন বিদেশি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল ৮ মার্চ পর্যন্ত এ প্রকল্পে কর্মরত মোট ৩৪৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে কারও মৃত্যু হয়নি বলেও জানিয়েছে ডিএমটিসিএল।

ডিএমটিসিএল জানিয়েছে, বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের সার্বিক গড় অগ্রগতি ৫৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার  ভায়াডাক্টের মধ্যে ১৩ দশমিক ২৭৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট দৃশ্যমান হয়েছে। ডিপোর অভ্যন্তরে ১৬ দশমিক ৯০ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে। ভায়াডাক্টের ওপরে ১০ কিলোমিটার রেল ট্র্যাক প্লিন্থ কাস্টিং সম্পন্ন হয়েছে, রোড কাম রেইল ভেহিক্যাল ব্যবহার করে ডিপোর অভ্যন্তরে এবং ভায়াডাক্টের ওপরে ওভারহেড ক্যাটেনারি সিস্টেম স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে।

কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব সচিব এমএএন সিদ্দিক বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। জাপান থেকে ঢাকার পথে মেট্রোরেল। ঢাকায় মেট্রোরেলের কোচ এলেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবো।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের ছাদ নির্মাণের কাজ চলছে। উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। উত্তরা উত্তর স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। উত্তরা উত্তর ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনে স্টিল স্ট্রাকচার ইরেকশন কাজ চলছে। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনে বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন এবং স্টেশন কন্ট্রোলার কক্ষ নির্মাণকাজ চলমান। মেট্রোরেল নির্মাণে স্বাভাবিক পানির প্রবাহ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় তা বিবেচনায় পাঁচটি লং স্প্যান ব্যালান্স ক্যান্টিলিভারের মধ্যে তিনটি শেষ হয়েছে।