X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইলিশ-পান্তার উন্মাদনা কমেছে

জুবায়ের আহমেদ
১৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:৩৬আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:২১

সারা দেশে পালিত হচ্ছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। রাজধানীতে রমনা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, চারুকলায় বরাবরের মতো উৎসবের আমেজে বরণ করে নেওয়া হয়েছে নতুন বছরকে। ঈদের ছুটির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভিড় একটু হালকা দেখা গেলেও বর্ষবরণের আনন্দে কোনও কমতি ছিল না। তবে এবার উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, অন্যান্য বছরের মতো জায়গায় জায়গায় পান্তা-ইলিশ বিক্রির পসরা বসেনি। ইলিশের মৌসুম না হওয়ার পরও পান্তা-ইলিশ খেতেই হবে, এরকম যে চর্চা শুরু হয়েছিল, সেটা অনেকটাই কমে এসেছে।  

বাংলা নববর্ষ বরণের উৎসবে শামিল হতে প্রতি বছরই পহেলা বৈশাখে রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভিড় করেন সাধারণ মানুষ। এছাড়া পাড়া-মহল্লায়ও দেখা যায় নববর্ষের নানা রকম অনুষ্ঠান। এবারও ব্যতিক্রম নয়। ঈদের ছুটির কারণে অনেকে গ্রামে। এরপরও নগরবাসী সাদা-লালসহ নানা রঙের দেশি পোশাক পরে ছুটে আসেন শাহবাগ এলাকার দিকে।

পহেলা বৈশাখে নগরবাসীর পান্তা-ইলিশ খাওয়া (ছবি: ফোকাস বাংলা)

রবিবার (১৪ এপ্রিল) সকাল সোয়া ৬টায় রমনা বটমূলে বাংলা নতুন বছর 'নববর্ষ ১৪৩১'-কে সুরে সুরে স্বাগত জানানো হয়। ছায়ানটের এই আয়োজনে অংশ নেন দেশের ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

সকাল সোয়া ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে অনুষদের সামনে থেকে নববর্ষ শোভাযাত্রা শুরু হয়। এরপর শাহবাগ মোড় ঘুরে রমনা ঢাকা ক্লাবের সামনে দিয়ে শিশুপার্কের মোড় ঘুরে আবার শাহবাগ হয়ে টিএসসি চত্বর ঘুরে আবার চারুকলা অনুষদের সামনে এসে শেষ হয় বর্ণাঢ্য এই শোভাযাত্রা। এতে অংশ নেন হাজারো উৎসবপ্রেমী। তাদের অনেকে বাংলার লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন উপকরণ, গ্রামীণ জীবনের অনুষঙ্গ, পশুপাখি, ফুলসহ নানা প্রতীক ও রকমারি মুখোশ হাতে নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। কেউ কেউ নেচে-গেয়ে উল্লাস করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনা বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় দেখা যায়নি বড় কোনও মেলা, ফুটপাতে অল্প কিছু দোকান বসে দেশীয় পণ্য নিয়ে (ছবি: প্রতিবেদক)

তবে নববর্ষ বরণের এই আয়োজন দুটি সকাল ১০টার পরপরই শেষ হয়ে যায়। এরপর শাহবাগ, রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পহেলা বৈশাখে ঘুরতে বের হওয়া সাধারণ মানুষের আনাগোনা বাড়ে। তবে অতীতের তুলনায় এ বছর সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল কম ছিল। উৎসবকে কেন্দ্র করে আয়োজনও ছিল কম। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কিছু ভ্রাম্যমাণ চটপটি-ফুচকার দোকানসহ অন্যান্য কিছু ভাজাপোড়া খাবারের দোকান ছিল। উদ্যানের দুই জায়গায় সাপের খেলা দেখানোর জন্য বসলেও মূলত ওষুধ বিক্রি ছিল লক্ষ্য। লোকজন ছিল কম। উদ্যানের ভেতরে লালন গানের আসর বসছে। এছাড়া টিএসিতে স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনের নানা আয়োজন হয়।

এদিকে রমনায় মানুষের কিছুটা ভিড় দেখা গেলেও অন্যান্য বছরের তুলনায় তা কম বলে মনে করেন উৎসব উদযাপন করতে আসা মানুষরা।

তুলনামূলক কম ভিড় ছিল শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ছবি: প্রতিবেদক)

পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের কোনও মেলার আয়োজন দেখা যায়নি এবার। জাতীয় জাদুঘরের উত্তর দিকের সড়কের ওপর কিছু প্লাস্টিকের খেলনা, চুড়ি, ছোট আকারের একতারা ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রসহ রান্নাঘরের কিছু ব্যবহার্য জিনিসপত্র বিক্রি করতে দেখা গেছে। অতীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশে ইলিশ-পান্তার আয়োজন করতেন দোকানিরা। এ বছর এই আয়োজন তেমন একটা দেখা যায়নি কোথাও।

রমনা পার্কেও দুপুরের দিকে ভিড় তেমন ছিল না (ছবি: প্রতিবেদক)

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পরিবার নিয়ে আসা সরকারি চাকরিজীবী ইসমাইল টুটুল বলেন, প্রতি বছরই আসা হয়। পরিবার নিয়ে নিজস্ব জাতিগত একটি উৎসব আয়োজন অংশ নিতে পারলে খুবই আনন্দ লাগে। তবে লোক কিছুটা কম। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে আগে উদ্যানে যে মেলার আমেজ ছিল সেটা আর নেই।

পহেলা বৈশাখে লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান (ছবি: প্রতিবেদক)

স্ত্রী স্বর্ণা গাইন ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রমনা পার্কে আসেন হরিদাস গাইন। উদ্দেশ্য ছিল ছায়ানটের আয়োজন শেষের দিকে এসে উপভোগ করবেন। আয়োজন শেষে পার্কে বসে ছিলেন। জিজ্ঞাসা করতেই স্বর্ণা গাইন বলেন, গত বছর রোজা থাকায় লোক খুবই কম ছিল। এবার সেই তুলনায় কিছুটা বেশি। কিন্তু আগে এর থেকেও অনেক বেশি লোক হতো।

উৎসব আমেজ কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগে মৎস্য ভবনের এদিকে অনেক দোকান বসতো, পান্তা ইলিশের আয়োজন হতো। এখন সেগুলো নেই।

সাপের খেলা (ছবি: প্রতিবেদক)

গরমের কারণে অনেকে বের হতে চাচ্ছেন না বলে মনে করেন রমনায় আসা মাহাবুব আলম। তিনি বলেন, বৈশাখী উৎসব পুরোটাই বাঙালির নিজস্ব। অন্য কোনও সংস্কৃতির এখানে জায়গা নেই। এমন একটি আয়োজনে অংশ নিলে নিজের ভেতরের বাংলা সত্তার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

বর্ষবরণ অনুষ্ঠান (ছবি: প্রতিবেদক)

রমনা পার্কের সামনে দাঁড়িয়ে বাচ্চাদের খেলনা বিক্রি করা হকার রমজান বলেন, ‘অন্য বছরগুলোতে শাহাবাগ থেকে মৎস্যভবন পুরোটা ফুটপাতে লোকের ভিড় থাকতো। এবার সেই ভিড় নাই। তাই মালও কম নিছি। যা আনা হইছে তা বিক্রি করে ফেলছি। বিকালের জন্য আরও কিছু আনবো বিকালে। লোক আরও আসতে পারে।’

মঙ্গল শোভাযাত্রার পর চারুকলা অনুষদের ভেতরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলে এই আয়োজন।

/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
দুই দফা অভিযানেও খোঁজ মেলেনি শিশুটির
খিলগাঁওয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
সর্বশেষ খবর
স্বর্ণপামে ৯ বিচারক: সর্বকনিষ্ঠ আদিবাসী লিলি, আছেন বন্ডকন্যাও
কান উৎসব ২০২৪স্বর্ণপামে ৯ বিচারক: সর্বকনিষ্ঠ আদিবাসী লিলি, আছেন বন্ডকন্যাও
‘“সুলতান পদক” পেয়ে আমি গর্বিত ও ধন্য’
‘“সুলতান পদক” পেয়ে আমি গর্বিত ও ধন্য’
বুয়েটকে হিজবুত তাহরীর-মুক্ত করতে ৬ শিক্ষার্থীর স্মারকলিপি
বুয়েটকে হিজবুত তাহরীর-মুক্ত করতে ৬ শিক্ষার্থীর স্মারকলিপি
বরুণের স্পিনের পর সল্ট ঝড়ে দিল্লিকে হারালো কলকাতা
বরুণের স্পিনের পর সল্ট ঝড়ে দিল্লিকে হারালো কলকাতা
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে