(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১১ মার্চের ঘটনা।)
১৯৭৩ সালের নির্বাচনে জয় লাভের পর চারদিন ধরে গণভবনে একই দৃশ্য। অসংখ্য মিছিলে গণভবন অভিমুখে, চারপাশ মুখর স্লোগানে। সবার হাতে ফুলের মালা, তোড়া, আর বঙ্গবন্ধুর জন্য বুকভরা ভালোবাসা।
দৈনিক বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষ মিছিল নিয়ে আসছে একের পর এক। গণভবনের নিরাপত্তা কর্মীরা হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। বাধা মানছে না। বঙ্গবন্ধুও সহাস্যে বেরিয়ে পুষ্পস্তবক গ্রহণ করছেন। একপর্যায়ে গণভবনের ভেতরে ভিড় এত বেড়ে যায় যে বঙ্গবন্ধুকে নিরাপত্তাকর্মীরা সরিয়ে নেন।
কে আসেনি সেই কয়দিন!
গণভবনে কে আসেনি সেই কয়েকটি দিনে! ১১ মার্চ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অভিনন্দন জানাতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কর্মীরাও আসেন। জাতীয় যুব কাউন্সিল সভাপতি মোস্তফা সারোয়ারের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু মাল্যভূষিত হন। নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি গাজী গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে ফরিদাবাদ হাজারীবাগের আওয়ামী লীগ কর্মীরা বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দন জানান। বঙ্গবন্ধুও এদের মধ্যে হারিয়ে যান। মালায় মালায় আচ্ছাদিত হয়ে পড়েন। নিরাপত্তা ব্যবস্থাকারী কর্মীরা বহুকষ্টে বঙ্গবন্ধুকে সরিয়ে নেন।
১২ মার্চ আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের প্রথম বৈঠক
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের প্রথম বৈঠক ১২ মার্চ নির্ধারণ করা হয়। সকাল দশটায় পার্লামেন্টের কমিটি রুমে সভা অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। এ বৈঠকেই ক্ষমতাসীন দলের পার্টির নেতা নির্বাচন করা হবে। বঙ্গবন্ধু ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম সংসদীয় দলের নেতা ও উপনেতা নির্বাচিত হবেন।
এদিকে নির্ভরযোগ্য মহল থেকে জানা যায়, ইউসুফ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনকে পূর্বপদে চিফ হুইপের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় বিকল্প ব্যক্তি হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক জনাব আব্দুল মোমেন। আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি কমিটির বৈঠকে যোগদানের জন্য মন্ত্রীপরিষদের সকল সদস্য এর মধ্যে ঢাকায় এসে পৌঁছান।
দেশের নিরীহ নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সমাজে আইন-শৃঙ্খলা সুপ্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি তফসিল অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আদেশের সংশোধন করা হয়। ১৯৭৩ সালের ১০ মার্চ থেকে বলবৎ তালিকাভুক্ত অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আদেশের সংশোধনী কার্যকর হওয়ার পর থেকে ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, ওষুধপত্র ও খাদ্যে ভেজাল, কালোবাজারি, চোরাচালান মজুতদার, বেআইনি অস্ত্র ও বিস্ফোরক রাখা অপরাধীকে জরিমানাসহ সর্বনিম্ন তিন বছর এবং সর্বোচ্চ ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
পুলিশ ছাড়াও তালিকাভুক্ত অপরাধের তদন্তের জন্য মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট অথবা সরকার নির্দেশ দিলে অফিসাররা এ ধরনের অপরাধের তদন্ত করবেন।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফলাফল গভীর বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলের বিপুল বিজয় সম্পর্কে কারও মনে সন্দেহের অবকাশ ছিল না। নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সংখ্যাধিক্য লাভ সম্পর্কে নিয়মিত মত প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু সংসদে বিরোধীদলের উপস্থিতি সম্পর্কে যারা নিশ্চিত ছিলেন তারা নির্বাচনের ফলাফল দেখে বিমূঢ় হন।