‘প্রধানমন্ত্রীর নজরে এলেই নদী দখলের কর্মকাণ্ড বন্ধ হবে’

নদী রক্ষার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার তার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তাই অব্যাহত নদী দখলের ঘটনা প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনা হলে এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ হবে বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল।

শনিবার (১৩ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাংবাদিক সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। আগামী ১৪ মার্চ আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, জাতীয় নদী জোট ও জাতীয় নদী রক্ষা আন্দোলন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

সুলতানা কামাল বলেন, ‘প্রাকৃতিক সম্পদের বড় অংশজুড়ে রয়েছে নদী। তাই এই প্রকৃতি বাঁচাতে হবে। নদী দিয়েই প্রাচীনকাল থেকে আমাদের সভ্যতা গড়ে উঠেছে। এমনকি শিল্প-সংস্কৃতিও নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। তাই অব্যাহত দখল, অবকাঠামো ও দূষণে ধ্বংসের মুখে সারাদেশের নদ-নদী-জলাশয় থেকে অবিলম্বে দখলদারদের, মাছ প্রকল্প, স্লুইচগেট, বাঁধ ও স্বল্প দৈর্ঘ্যের সেতু অপসারণ করতে হবে।’

এসময় সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক নদী দিবস উপলক্ষে বেশকিছু দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো-

১. আদালতের রায়ের ভিত্তিতে সব নদীর সীমানা নির্ধারণ, নির্মোহভাবে দখলদার উৎখাত ও তা দখলমুক্ত রাখতে হবে;

২. নদী নামক জীবন্ত স্বত্তার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে;

৩. নদীতে ‘বাঁধ-ব্যারেজ-রেগুলেটর বসানোর বেষ্টনী নীতি’ ভিত্তিক নদী ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে এবং  ‘বাংলাদেশ ডেল্টা পরিকল্পনার-২১০০' নামের সেই একই ভুল ব্যবস্থাপনা বন্ধ করতে হবে;

৪. মৃত ও ভরাট নদী ড্রেজিং করে তার প্রবাহ ও নাব্য পুনরুদ্ধার করতে হবে এবং নদীর মাটি/পাড় ইজারা দেওয়া বন্ধ করতে হবে;

৫. ভূমি মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসমূহ, নগর উন্নয়ন সংস্থাসমূহ, বিআইডব্লিটিএ ও নদী কমিশনকে দৃঢ়ভাবে নদীবান্ধব নীতি অনুসরণ করতে হবে;

৬. বাংলাদেশকে জাতিসংঘ প্রণীত পানি প্রবাহ আইন-১৯৯৭ অবিলম্বে অনুস্বাক্ষর ও সে অনুযায়ী নদীরক্ষায় পদক্ষেপ নিতে হবে, তার ভিত্তিতে একটি আঞ্চলিক পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা নীতি-কৌশল প্রণয়ন ও সব আন্তঃসীমান্ত নদীর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে;

৭. সব শিল্প কারখানায় বর্জ্য পরিশোধন প্লান্ট সংযোজন ও ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে;

৮. শহুরে গৃহস্থালী ও হাসপাতাল বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ ও তরল বর্জ্য পরিশোধন করা সম্পূর্ণ বাধ্যতামূলক করতে হবে;

৯. নদীর ওপর কাঁচা/পাকা পায়খানা নির্মাণ বন্ধ এবং জমিতে রাসায়নিক সার-কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে;

১০. নৌ-যান নির্গত ময়লা,বর্জ্য, তেল পানিতে ফেলা নিষিদ্ধ ও নৌ-যানে তেলের পরিবর্তে গ্যাস বা সোলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে।

অনুষ্ঠানটি প্রয়াত সাংবাদিক ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদকে উৎসর্গ করা হয়।