সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পাকিস্তানের মনোভাব নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ সম্পর্কে পাকিস্তানি মনোভাবের সমালোচনা করে বলেন, মনোভাবের ফলে সমস্যা সমাধানের অগ্রগতি অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যুগোস্লাভ বার্তা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেন, নয়া বাস্তব মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানালে এই উপমহাদেশে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে না।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, পাকিস্তান কেবল অস্ত্রের কথা চিন্তা করে, জনসাধারণের নয়। পাকিস্তানে আটক বেসামরিক ব্যক্তিদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সমস্যা সমাধানে তিনি জাতিসংঘকে জোর প্রচেষ্টা চালাতে বলেন। তিনি আরও বলেন, সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের ত্রিশ লাখ লোকের হত্যাকারী ও বুদ্ধিজীবীদের নির্মূলকারী পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলাদেশ করবে।

মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ১৯৭৩ সালের এইদিনে ঢাকায় মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ২১ সদস্যবিশিষ্ট নয়া মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করেন।

মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে খাদ্য পরিস্থিতি, ব্যবহার্য দ্রব্যাদি ও আইন-শৃঙ্খলাসহ দেশের সাধারণ পরিস্থিতি সম্পর্কে পর্যালোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে নবনির্বাচিত জাতীয় সংসদের উদ্বোধনী অধিবেশনের কর্মসূচি সম্পর্কে আলোচনা হয়। সচিবালয়ের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট কক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক চলে।

অত্যাবশ্যকীয় পণ্য মজুদ করলে শাস্তি

১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সংক্রান্ত আদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি। এই আদেশে একসঙ্গে কী পরিমাণ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য মজুদ রাখা যাবে এবং ডিলার, আমদানিকারক ও উৎপাদনকারীরা একসঙ্গে একই ধরনের পণ্য কতটুকু রাখতে পারবেন এবং সর্বোচ্চ কতদিন রাখতে পারবেন তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। কেউ রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশে ‘বাংলাদেশ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আদেশ’ লঙ্ঘন করলে তাকে ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ তালিকাভুক্ত অপরাধ বিশেষ ট্রাইব্যুনালের আদেশ অনুযায়ী দণ্ড দেওয়া হবে। ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ তালিকাভুক্ত অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আদেশ অনুযায়ী সর্বনিম্ন সাজা তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ জরিমানাসহ ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড।

সেনাবাহিনী সতর্ক

রাজাকার, কালোবাজারি, অসাধু ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারীদের সমূলে উৎখাতের জন্য সরকার সেনাবাহিনীর রক্ষীবাহিনী ও বাংলাদেশ রাইফেলস প্রস্তুত রেখেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মালেক উকিল এইদিনে এ তথ্য প্রকাশ করে বলেন, সমাজবিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করতে এবং জনগণকে নিয়ে তাদের খেলা বন্ধ করতে সরকার দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। সমাজের এসব দুর্বৃত্তদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য তিনটি বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্দেশ দিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন সমাজবিরোধীদের উৎখাতে পরিস্থিতি বাধ্য করলে বেসামরিক প্রশাসনকে সাহায্য করার জন্য যেকোনও মুহূর্তে সশস্ত্রবাহিনী তলব করা হতে পারে।

ক্ষমা প্রদর্শন বিবেচনা করা হোক

নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে এইদিনে পত্রিকার খবরে বলা হয়, স্বাধীনতার পর দালাল আইনে বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক ১৪ লাখ লোকের বিরুদ্ধে কোনও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বা চার্জশিট প্রদান করা হয়নি। এ ছাড়া দালাল আইনে গ্রেফতার হতে পারে এই সন্দেহে অনেক লোক এখনও আত্মগোপনে রয়েছে এমন অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে মফস্বল এলাকার ব্যবসায়ী বা একটু সম্পদশালী লোকদের ভয় দেখিয়ে আর্থিক সুবিধা আদায় করতে চাইছে। এ পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞমহল অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, যার বিরুদ্ধে হত্যা-ধর্ষণ অগ্নিসংযোগ লুটপাটের প্রত্যক্ষ অভিযোগ রয়েছে কিংবা স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়েছিলেন এবং তথাকথিত মন্ত্রিসভায় যোগদান করেছিলেন বা যাদের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সামরিক জান্তার সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে এমন ব্যক্তি ছাড়া অন্যান্যদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা প্রয়োজন।