পাকিস্তানের গড়িমসি উপমহাদেশে উত্তেজনার কারণ

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২৮ মার্চের ঘটনা।)

যুগোস্লাভিয়ার প্রধানমন্ত্রী জামাল বিয়েদিস বলেছেন যে, তার দেশ বাংলাদেশের ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে যাবে। পাকিস্তান কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেওয়ার ফলে এই উপমহাদেশের উত্তেজনা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। চার দিনব্যাপী রাষ্ট্রীয় সফর শেষে এদিন (২৮ মার্চ) সকালে নেপালের উদ্দেশে যাত্রার প্রাক্কালে রাষ্ট্রীয় অতিথিশালায় অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিমত ব্যক্ত করেন। এদিন বাংলাদেশ-যুগোস্লাভিয়ার যৌথ ইশতেহার প্রকাশ করা হয়।পাকিস্তানের শুভ বুদ্ধির যেন উদয় হয় তার জন্য যুগোস্লাভিয়া অন্যান্য জোট নিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জানান।

পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিদের উদ্ধারের বিষয়ে তার দেশ এবং তিনি নিজে কিছু করতে পারেন কিনা, প্রশ্ন করা হলে জামাল বিয়েদিস বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন।’ শান্তিপূর্ণ উপায়ে ও আলোচনার মাধ্যমে এই মানবিক সমস্যাটি সমাধান করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এই সমস্যার সমাধান না হলে উপমহাদেশের শান্তি স্থাপনে বাধার কারণ হবে। শুধু তাই নয়, এর পরিণতি আরেও খারাপ হতে পারে। এই সমস্যার সমাধান উপমহাদেশের অন্যান্য সমস্যার সমাধানের পথ সুগম করবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

দৈনিক ইত্তেফাক, ২৯ মার্চ ১৯৭৩বঙ্গবন্ধু ঢাকা-১২ আসনটি রাখবেন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচনি এলাকা ঢাকা-১২ আসনটি রেখে অন্যান্য আসন ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। নির্বাচন কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শাসনতন্ত্রের ৭১ (২) এর ‘ক’ ধারা মোতাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে এক চিঠিতে বঙ্গবন্ধু এ কথা জানান। বঙ্গবন্ধু তিনটি আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেগুলো হচ্ছে— বাকেরগঞ্জ-৪, ফরিদপুর-১১, ঢাকা-১২ আসন। তিনি ঢাকা-১২ আসন রাখায় অন্য দুটি আসন শূন্য হয়েছে।

স্বীকৃতি দিলো লেবানন

লেবানন এই দিনে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর এক বিরাট কূটনৈতিক পরাজয় সূচিত হয় বলে সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে বলা হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে এসব সমস্যার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানে বিরত থাকার জন্য এতদিন ধরে আরব দেশগুলোর প্রতি ভুট্টো অনুরোধ জানিয়ে আসছিলেন।

দৈনিক ইত্তেফাক, ২৯ মার্চ ১৯৭৩গণ-আন্দোলনের জোয়ারে দুর্নীতির আবর্জনা দূর করবো

গণ-আন্দলোনের জোয়ারে সমাজের বুক থেকে দুর্নীতির আবর্জনা দূর করতে বঙ্গবন্ধুর অনুসারীরা বদ্ধপরিকর। ঝিনাইদহ জেলার জাতীয় শ্রমিক লীগ আয়োজিত এক সম্মেলনে আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও নবনির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য নূরে আলম সিদ্দিকী এই মন্তব্য করে বলেন, ‘শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার জন্য যে মরণ জয়ী শপথ নিয়ে আমরা অস্ত্র তুলে নিয়েছিলাম, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নঘেরা এই সমাজের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করছে সামাজিক শত্রুরা নিজ স্বার্থ চরিতার্থের মাধ্যমে। বিগত নির্বাচনে জনগণের রায় ঘোষণা করেছে যে, যেকোনও উপায়ে এই শত্রুদের নির্মূল করতেই হবে।’ শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সমাজতন্ত্রের একদল শত্রু সুক্ষ্মভাবে শ্রমিকদের পথে বাধা সৃষ্টি করছে এবং এই কর্মবিমুখতার পরিবেশ তৈরি করছে।  দেশকে আত্মনির্ভরশীল করতে হলে  সরকারকে যেমন গণমুখী কর্মসূচি নিতে হবে, তেমনই শ্রমিকদেরকেও পরিশ্রম করতে হবে।’