গণভবনে দাতা দেশের প্রতিনিধিরা

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৩১ মার্চের ঘটনা।)

আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সাহায্যকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা ১৯৭৩ সালের এদিন সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কে দুদিনব্যাপী সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন তারা। সাক্ষাৎকালে অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ, পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

দেশ পুনর্গঠনে সাহায্যের আভাস

অর্থ ও পাটমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আগামী জুলাই থেকে প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হলে বাংলাদেশের পুনর্গঠন উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোর কাছে সহানুভূতি ও সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করে। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দুদিনব্যাপী বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ড. নুরুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। বাংলাদেশ বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে সাহায্য কামনা করে বলে উদ্বোধনী ভাষণে তাজউদ্দীন আহমদ জানান। তিনি সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশিষ্টজনদের এই মর্মে আশ্বাস দেন যে, বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে তার সামগ্রিক মানবিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার পূর্ণাঙ্গ সদ্ব্যবহারে সচেষ্ট থাকবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রতিনিধিরা গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তারা বাংলাদেশের পুনর্গঠনে সাহায্যদানের আভাস দেন বলে সূত্র জানায়। ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা যায় যে বাংলাদেশের সমস্যাবলি ও উন্নয়ন প্রকল্পের পর আগামী জুন মাসের মধ্যে প্রথম যোজনায় সাহায্যদানের উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম গঠিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

১৯৭৩ সালের ১ এপ্রিল প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকার প্রধান শিরোনামপাকিস্তানের এক জেনারেলের স্বীকারোক্তি

এই দিনে পাকিস্তানের এক জেনারেলের স্বীকারোক্তি আলোচনায় উঠে আসে, যেখানে তিনি বলছেন, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানই প্রথমে ভারত আক্রমণ করেছিল। এ কথা অকপটে স্বীকার করেছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জেনারেল মেজর জেনারেল মুনিব খান। মেজর জেনারেল মুনিব খান সে সময় অবসরপ্রাপ্ত হলেও তিনি যুদ্ধে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন এবং ১৯৭৩ সালেও পাকিস্তানের সামরিক নথিপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ‘পাকিস্তানে নেতৃত্বের সংকট’ শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানই প্রথমে ভারত আক্রমণ করে। আর এই আক্রমণের নির্দেশ দিয়েছিলেন জেনারেল ইয়াহিয়া। পরবর্তীতে ইয়াহিয়া আক্রমণের ভয়ে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলেন এবং তার পরবর্তী কর্মসূচি স্পষ্ট ছিল না।’ যুদ্ধে পাকিস্তানের বিপর্যয়ের জন্য জেনারেল ইয়াহিয়াকে দায়ী করেন তিনি।

স্বীকৃতি ছাড়া যুদ্ধবন্দিদের মুক্তির পরিবেশ সৃষ্টি হবে না

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী পর্যবেক্ষক মিশনের একজন মুখপাত্র এই দিনে বলেন, পাকিস্তান তার বাংলাদেশবিরোধী নীতি অব্যাহত রাখা এবং বাংলাদেশের ওপর তার তথাকথিত এলাকা দাবি থেকে বিরত না হলে, পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হবে না।’ তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলেই পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি ও অন্যান্য প্রশ্নের আলোচনার পথ উন্মুক্ত হবে। পাকিস্তানের যুদ্ধবন্দিদের প্রশ্নে বাংলাদেশ ও ভারতবিরোধী অপপ্রচারের কারণে এটির অগ্রগতি হচ্ছে না।’ পাকিস্তানের প্রতিনিধিদল জাতিসংঘে সেই সময়ে অপপ্রচারের যে তৎপরতা শুরু করেছে, বাংলাদেশ পর্যবেক্ষণ মিশনের মুখপাত্র তারই পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা বলেন।