বঙ্গবন্ধুকে শ্রমিকদের উপহার

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২ এপ্রিলের  ঘটনা।)

১৯৭৩ সালের এই দিন বিকালে সদরঘাট আইডব্লিউটিএ টার্মিনালের শ্রমিক লীগের পক্ষ থেকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রহমানকে একটি রৌপ্য নির্মিত নৌকা প্রতীক উপহার দেওয়া হয়। শ্রমিকরা মিছিল সহকারে গণভবনে উপস্থিত হলে বঙ্গবন্ধু তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা ‘বঙ্গবন্ধু যেখানে আমরা আছি সেখানে’, ‘বঙ্গবন্ধু জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিয়ে জাতির জনককে অভিনন্দিত করেন।

ট্রাইব্যুনালে ফজলুল কাদের চৌধুরীর বিচারের নির্দেশ

চট্টগ্রামের ফজলুল কাদের চৌধুরীর বিচার অবিলম্বে ট্রাইব্যুনালে অনুষ্ঠানের আদেশ জারি করা হয়। বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে এই দিনে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় এ সংবাদ প্রকাশ করা হয়। একই আদেশ অনুযায়ী, পাবনার এমএ মতিনের বিচারও বিশেষ ট্রাইব্যুনালে হবে বলে উল্লেখ করা হয়। ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত মুসলিম লীগের নেতা খাজা খয়ের উদ্দিনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল হবে বলেও পত্রিকাটি জানায়।

১৯৭৩ সালের ৩ এপ্রিলের পত্রিকাপাকিস্তানের ওপরে সমস্যার সমাধান নির্ভরশীল

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এস এ করিম নিউ ইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন যে ‘পাকিস্তান কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলে মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা সহজ হবে, যার ওপরে উপমহাদেশের অন্য সব সমস্যার সমাধান নির্ভর করছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে আলাপ-আলোচনা মাধ্যমে যুদ্ধবন্দি মুক্তির প্রশ্নটি ফয়সালা করা যেতে পারে। তবে বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতিদানের পর এই ধরনের আলাপ-আলোচনা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর মধ্যে বর্তমানে কোনও বৈঠক সম্ভব নয়।’ তিনি উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশের সম্মতিক্রমে যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দেওয়া যেতে পারে। তিনি আশা ব্যক্ত করেন, সাধারণ পরিষদের পরবর্তী অধিবেশনে বাংলাদেশ জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে।

এদিকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোর হুমকির ফলে মোহাম্মদ আসলাম খাটক উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের গভর্নরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ভুট্টো এই মর্মে খাটককে হুমকি-ধমকি দেন যে যদি তার প্রস্তাবে তিনি রাজি না হন, তবে তিনি প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙে দেবেন।

বঙ্গবন্ধু ৪ এপ্রিল সুনামগঞ্জ যাবেন

জাতির জনক প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আগামীকাল ৪ এপ্রিল সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে এক জনসভায় ভাষণ দেবেন বলে পত্রিকায় জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে সেখানে যাবেন এবং বেলা সাড়ে ১১টায় সেখানে জনসভা করবেন। বঙ্গবন্ধু ওইদিনই বিকালে রাজধানীতে ফিরে আসবেন বলেও তার কর্মসূচিতে জানানো হয়।

১৯৭৩ সালের ৩ এপ্রিলের পত্রিকার শিরোনামনির্বাচন সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞাতব্য

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই দিনে বলা হয়, মোট ২৮৮টি নির্বাচনি এলাকায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরইমধ্যে ৯১টি নির্বাচনি এলাকায় প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন এবং পাবনার একটি আসনে একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ওই এলাকার নির্বাচন কার্যবিধি স্থগিত রাখা হয়। ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধি আইনের ৭৪(৪) ধারা অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি আইনত অপরাধী বলে সাব্যস্ত হবেন, যদি তিনি একটি ভোটকেন্দ্রে একাধিক ভোট দেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যালট কাগজের জন্য আবেদন করেন। ৭৬ ধারায় বলা হয়, কোনও ব্যক্তি মিথ্যা পরিচয় দেওয়ার অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত হবেন, যদি তিনি অন্য কোনও জীবিত বা কাল্পনিক ব্যক্তির নামে ভোটদান করেন, বা ভোটদানের উদ্দেশ্যে ব্যালট কাগজের জন্য আবেদন করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার দেশব্যাপী প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’