নকল ডিগ্রি কোনও কাজে লাগবে না: বঙ্গবন্ধু

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৩ এপ্রিলের  ঘটনা।)

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমাজকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার জন্য ছাত্রদের গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ার উপদেশ দেন। ১৯৭৩ সালের এই দিনে তিনি গণভবনে একদল ছাত্রলীগ কর্মীর সঙ্গে কথা বলছিলেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর প্রতি  শ্রদ্ধা ও সমাজকে সব ধরনের দুর্নীতি থেকে মুক্ত এবং পরীক্ষায় নকল প্রতিহত করার ব্যাপারে তাদের প্রতিজ্ঞার কথা জানাতে গণভবনে গিয়েছিলেন। বিপিআই’র খবরে প্রকাশ, বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে সস্নেহে কথা বলছিলেন। তিনি দুর্নীতি উচ্ছেদ, পরীক্ষায় নকল বন্ধের ব্যাপারে ছাত্রলীগ কর্মীদের ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং তাদের সত্যিকার জ্ঞান অর্জনের জন্য পড়াশোনার ব্যাপারে কঠোর পরিশ্রম করতে বলেন।

তিনি বলেন, ‘নকল করে ডিগ্রি পেলে তারা নিজেদের কাজে লাগবে না, সমাজের মঙ্গল হবে না। দুনিয়ার মানুষ তাদের নিন্দা করবে। জাতিকেও হেয় করা হবে।’ বঙ্গবন্ধু জাতীয় উৎপাদন বাড়ানোর জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার ব্যাপারেও ছাত্রদের আন্তরিকতা ও দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দেন।

১৯৭৩ সালের ৪ এপ্রিলের পত্রিকার শিরোনামভুট্টোকে গ্রেফতারের ষড়যন্ত্র

রাওয়ালপিন্ডির সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা পাকিস্তান টাইমস লিখেছে—ইরানে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে প্রেসিডেন্ট দেশে ফিরলে তাকে গ্রেফতার করা হতো। সামরিক বাহিনীর এক অফিসারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি নাকি এই চক্রান্তের কথা জানিয়েছেন বলে পাকিস্তান টাইমস দাবি করে। অপরদিকে আব্দুল গাফফার খান প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে জনগণের ওপর একটি শাসনতন্ত্র চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন। তিনি পেশোয়ারে কাউন্সিলের সভায় বক্তৃতা করছিলেন। ষড়যন্ত্রকারীরা অন্তত একজন রাজনীতিককে তাদের এই পরিকল্পনার কথা আগে থেকে জানিয়েছিল। তবে খবরটি তখন পর্যন্ত সরকারিভাবে সমর্থিত হয়নি। পাকিস্তান টাইমসের খবরে আরও বলা হয়, ভুট্টোকে গ্রেফতার করে জাতীয় পরিষদে নিয়ে গিয়ে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস করানো হতো এবং সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হতো।

সমাজকে রাহুমুক্ত করা শুদ্ধি অভিযানের লক্ষ্য

এদিন তিতাস গ্যাস কর্মচারী ইউনিয়ন নবনির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য নূরে আলম সিদ্দিকী ও আব্দুল কুদ্দুস মাখনের সম্মানে এক সংবর্ধনার আয়োজন করে। ইউনিয়ন সভাপতি আব্দুল বারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সংবর্ধনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা এম এ রশিদ। সিদ্দিকী বলেন, ‘শুদ্ধি অভিযান একটি সামাজিক অভিযান। এই অভিযান সফল হলে বাংলার নির্যাতিত মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। আওয়ামী যুবলীগের শুদ্ধি অভিযানের কথা শুনে অনেকেই আঁতকে ওঠেন।’

তিনি বলেন, ‘এখনও নিজেদের শুধরাবার সময় রয়েছে।’ সিদ্দিকী বলেন, ‘সমাজতন্ত্র কায়েমে তারাই বাধা সৃষ্টি করছে, যাদের মিল-কারখানা সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত করে জনগণের সম্মিলিত সম্পত্তিতে পরিণত করেছে। নূরে আলম সিদ্দিকী সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সোনার বাংলা গড়ার কাজে সহায়তা করতে অনুরোধ করেন।

১৯৭৩ সালের ৪ এপ্রিলের পত্রিকার শিরোনামবাস্তবতার স্বীকৃতি অপরিহার্য

ভারত ও ইন্দোনেশিয়া এই অভিমত ব্যক্ত করে যে, ভারতীয় উপমহাদেশে স্বাভাবিক অবস্থা ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য উপমহাদেশের বর্তমান বাস্তবতা স্বীকার ও গ্রহণ করে নেওয়া আবশ্যক। ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে দুদিনব্যাপী আলোচনার পর প্রকাশিত যুক্ত ইশতেহারে ভারত মহাসাগরে বৃহৎ শক্তিবর্গের হস্তক্ষেপ অবসানের জন্য আহ্বান করা হয়। বলা হয় যে, ভারত মহাসাগর থেকে বৃহৎ শক্তিবর্গের উত্তেজনা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার অবসান এই এলাকার শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ব্যাপকভাবে সহায়ক হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনে করেন যে, উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান বাস্তবতাকে স্বীকার করে নাও। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন যে, প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান করুন, এটাই এই সুপারিশের উপপাদ্য।

রেশনে তখনও চালের সংকট

রেশনের দোকানে চালের অভাব দেখা দেয় চরমে। রেশন দোকানগুলোর মধ্যে শতকরা ৭৫ ভাগ দোকানে চাল নেই বলে গ্রাহককে ফেরত পাঠানো হয়। টানা দুই-তিন সপ্তাহ যাবৎ চাল দেওয়া যাচ্ছে না। এদিকে কয়েকটি রেশন দোকানে চাল এলেও কার্ডপিছু ৬ ছটাক করে চাল দেওয়া হয়। ওইসব রেশন দোকানের মালিকরা জানান, চাল এত কম সরবরাহ করা হচ্ছে যে, এর চেয়ে বেশি দেওয়া সম্ভব না।