পুষ্টিকর খাদ্য ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশের দাবি বঙ্গবন্ধুর

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৬ এপ্রিলের ঘটনা।)

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বাণীতে বলেছেন, পৃথিবীর সর্বোচ্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হবে। বাংলাদেশের সর্বত্র দিবসটি বিশেষ মর্যাদা সহকারে উদযাপিত হবে। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্বাসনে স্বাধীনতা লাভের শুরু থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে। আমি এই মহান প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ জানাই।’

১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিলের পত্রিকার শিরোনামবঙ্গবন্ধু বলেন, ‘১৯৭২ সালের মে মাসে আমরা যখন সংস্থার সদস্য পদের জন্য আবেদন করি, তখন পাকিস্তানের বিপুল অপপ্রচার সত্যেও পৃথিবীর সকল দেশের সহায়তায় বাংলাদেশ এই বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ লাভ করে। বিশেষভাবে স্মরণীয় যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক প্রশ্নে কোনও দেশ প্রতিকূলতা প্রদর্শন করেনি।’ সেজন্য বঙ্গবন্ধু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে এর প্রত্যেক সদস্যকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান।

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘‘জানতে পারলাম, এই বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘গৃহে শান্তির সূচনা’ এই আদর্শের ওপরে কাজ করে যাবে। আদর্শ সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। তবে এই আদর্শের বাস্তবায়নে আরও প্রয়োজন পুষ্টিকর খাদ্য, স্বাস্থ্যকর  ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা।’’

১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিলের পতিকাযুগপৎভাবে কার্যক্রম কার্যকরী করতে পারলে একটি সুস্থ সমাজ গড়ে উঠতে পারে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে গণমুখী চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রবর্তন করার জন্য সরকার স্বাধীনতা লাভের পর থেকে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। বর্তমানে প্রত্যেক থানায় ডাক্তার পাঠানো হচ্ছে। ঘরে ঘরে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মীদেরকে পাঠানো হচ্ছে। তারা একইসঙ্গে রোগ-ব্যাধির চিকিৎসা এবং জন্মনিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। একদিকে প্রতিটি মানুষ সুস্থ ও সবল দেহে যাতে দীর্ঘায়ু লাভ করতে পারে, অপরদিকে পরিকল্পিত পরিবার-পরিকল্পনার মধ্যে দিয়ে যাতে অন্ন- বস্ত্র-বাসস্থান ও আনুষঙ্গিক সমস্যাবলীর হাত থেকে দেশকে মুক্ত করা যেতে পারে, সেই চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল প্রকাশিত দৈনিক বাংলার খবরপাকিস্তানের নেওয়া ঋণ বাংলাদেশ শোধ করবে না

অর্থ ও পাটমন্ত্রী তাজুদ্দিন আহমেদ ১৯৭৩ সালের এইদিনে স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পাকিস্তানের নেওয়া কোনও  বৈদেশিক ঋণ বাংলাদেশ পরিশোধ করবে না। আর এই ঋণগুলো  নিয়ে কোনও কথাই বলা যাবে না। ঋণ নিয়েছে পাকিস্তান তা তারাই পরিশোধ করবে। এর সঙ্গে বাংলাদেশের কোনও সম্পর্ক নেই। অর্থ ও পাটমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ  একজন বিদেশি সাংবাদিকের কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন,  ‘স্বাধীনতার আগে বৈদেশিক সাহায্য নিয়ে কাজ শুরু হয়েছিল এখানে। সেসব অসমাপ্ত প্রকল্পগুলোর ব্যাপার হবে আলাদা। এই প্রকল্পগুলো শেষ করার ব্যাপারে নতুন করে আলোচনা হতে পারে। নতুনভাবে পুনরায় কার্যকরীও করা যেতে পারে।’

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্র আরও বলেন, ‘পাকিস্তান আন্তর্জাতিক ত্রাণ তহবিল ও এমনকি পাকিস্তান স্টেট ব্যাংকে যে সোনা ছিল, তারা সেই ভাগ বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দেয়। বৈদেশিক ঋণ দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানকে। সেই ঋণ পরিশোধ করবে পাকিস্তানই। আমরা পাকিস্তানের দায় কেন নেবো।’

তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে অর্জিত বৈদেশিক অর্থ পাকিস্তান বাংলাদেশকে দেয়নি।’