দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়েছে। প্রথম ডোজ দেওয়ার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কর্মসূচি শুরু হয়।
যশোর প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় যশোর জেনারেল হাসপাতালের টিকা কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, প্রথম ধাপে যশোরে এক লাখ ১৮ হাজার ৬০ জন করোনার টিকা গ্রহণ করেন। তাদের জন্য দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রথম চালানে ৭৮ হাজার ডোজ টিকা হাতে পেয়েছে স্বাস্থ্যবিভাগ। এ টিকা কার্যক্রম চলার মধ্যে বাকি ডোজের টিকাও হাতে এসে পৌঁছাবে। সকাল ৮টার আগেই যশোর জেনারেল হাসপাতালের কেন্দ্রে হাজির হন টিকা গ্রহণকারীরা। তারা লাইন দিয়ে একে একে টিকা গ্রহণ করেন। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এ টিকাদান কার্যক্রম চলবে।
সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, জেলার ১২টি কেন্দ্রে ৩৬টি টিম টিকা প্রদানের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রথম দিনে জেলার চার হাজার টিকাগ্রহণকারীর মোবাইলে দ্বিতীয় ডোজের টিকা গ্রহণের টেক্সট গেছে। তারাই আজ টিকা গ্রহণ করবেন। সব কেন্দ্রে সকাল থেকে সুষ্ঠুভাবে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এদিকে ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ অডিটোরিয়াম বুথে সকাল থেকে টিকা গ্রহণকারীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। বিশেষ করে ভিআইপি ব্যক্তিদের টিকাগ্রহণের ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এসময় সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনও বিষয় দেখা যায়নি।
সিরাজগঞ্জ ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. কামরুন নাহার বলেন, করোনার দ্বিতীয় ডোজের জন্য সিরাজগঞ্জ সদরসহ জেলায় ১৯টি বুথ খোলা হয়েছে। যাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার তারিখ নির্ধারিত ছিল, তারা টিকা নিতে কেন্দ্রে আসছেন। তবে এখন পর্যন্ত যারা টিকা নেননি তাদেরকে প্রথম ডোজ দেওয়ার কার্যক্রমও চলছে।
এদিকে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভ্যাকসিনের ভায়েল মজুত আছে সবখানেই। যদিও গত দু’দিন ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় দ্বিতীয় ধাপের ভ্যাকসিন পৌঁছানো শুরু করলেও সবখানে এখনও দ্বিতীয় চালানটি পৌঁছাতে পারেনি বেক্সিমকোর ভ্যাকসিন সরবরাহকারী গাড়ি। তবে এ প্রক্রিয়াটি ধারাবাহিক, শুক্রবারসহ পরের সপ্তাহজুড়েই সব জেলায় ভ্যাকসিন পৌঁছানোর পরিকল্পিত লক্ষ্য নিয়েই সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এরপরেও ভ্যাকসিন সরবরাহে ঘাটতি না হওয়ার বড় কারণ, প্রথম ধাপে প্রতিটি জেলায় সরবরাহ করা ভ্যাকসিন দুই ডোজ হিসেবে পাঠানোয় এর পরিমাণ চাহিদার চেয়ে বেশি ছিল। পরে দ্বিতীয় ডোজের জন্য মজুত না করে ভ্যাকসিন প্রয়োগ অব্যাহত রাখার সরকারি নির্দেশনার কারণে দেশের কোনও জেলায় প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন নিঃশেষ হয়ে যায়নি। আর নানাবিধ কারণে ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের সংখ্যা হঠাৎ করে কমে যাওয়ায় সবখানেই কিছু ভায়েল অবশিষ্ট রয়েছে। তাই প্রতিটি জেলাতেই সরকারি নির্দশনা অনুসারে প্রথম দফায় পাঠানো অবশিষ্ট ভ্যাকসিন দিয়েই শুরু হচ্ছে দ্বিতীয় ডোজের কর্মসূচি। এরমধ্যেই পৌঁছে দেওয়া হবে চাহিদা অনুযায়ী পরের চালান।
তবে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়া ও হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ায় অনেকেই এখন হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছেন। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও কিছু মানুষ আক্রান্ত হওয়ায় এর কার্যকারিতা নিয়ে অনেকে সংশয়ে ভুগছেন। আর সামনে রোজা। তাই দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভীষণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে প্রতিটি জেলার ভ্যাকসিন কর্মসূচি সংশ্লিষ্টদের।
এদিকে, ভ্যাকসিন গ্রহণ বিষয়ে কিছু সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জনসাধারণের উদ্দেশে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে-
- ৮ই এপ্রিল থেকে এসএমএস পাওয়া সাপেক্ষে দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে,
- যারা যোগ্য হবেন তাদের মোবাইল ফোনে এসএমএস চলে যাবে,
- যাদের ভ্যাকসিন দেওয়ার পর দুই মাস অতিবাহিত হয়েছে কিন্তু এসএমএস পাননি তারা অবশ্যই টিকা কার্ড, এবং টিকা কার্ডের ফটোকপি নিয়ে টিকা কেন্দ্রে নিয়ে আসবেন,
- দ্বিতীয় ডোজের জন্য আগত সবাইকে টিকা কার্ড এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আসতে হবে,
- কারও টিকা কার্ড হারিয়ে গেলে কিংবা কোনও কারণে নষ্ট হয়ে গেলে অনলাইন থেকে পুনরায় কার্ড ওঠানো যাবে,
- দুই মাস পূরণের আগে ২য় ডোজের ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে না, তবে পরে নেওয়া যাবে (১২ সপ্তাহ পর্যন্ত),
- রেজিস্ট্রেশনকৃত হজ যাত্রীদের বয়স ১৮ বছরের বেশি হলেই রেজিস্ট্রেশন করে ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। (এমন হজযাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। তাদের দ্রুত রেজিস্ট্রেশন করে ভ্যাকসিন নিতে বলা হয়েছে। সৌদি আরবের হজ কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, ভ্যাকসিন গ্রহণের প্রমাণপত্র ছাড়া এবছর হজে অংশ নিতে দেওয়া হবে না),
- প্রথম ডোজের টিকা দেওয়ার কর্মসূচি আগের মতোই এমনকি রমজান মাসেও অব্যাহত থাকবে তাই প্রথম ডোজের টিকা নেওয়ার জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে নির্ধারিত দিনে নির্ধারিত কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে,
- পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন আছে, শেষ হওয়ার ভয়ে কেউ ভীত হবেন না, গুজবে বিশ্বাস করবেন না,
- রোজা রেখে ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে,
- কেন্দ্র পরিবর্তন করে আপাতত দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে না
- টিকা কেন্দ্রে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরে আসতে হবে এবং প্রত্যেক টিকা গ্রহণকারীকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আরও বলা হয়েছে, ভ্যাকসিনদাতা এবং স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতা করলে গ্রহীতার কাজ দ্রুত এবং সহজ হবে।
এছাড়াও স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্যে বাইরে গেলেই ঘরে ফেরার পর বা যেখানে সুবিধা আছে সেখানে সাবান-পানি দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এছাড়াও সঠিক তথ্যের প্রয়োজনে ৩৩৩, ৯৯৯ অথবা ১৬২৬৩ হেল্প লাইনে ফোন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিনের প্রস্তুতি নিয়ে জেলা সিভিল সার্জন ও তাদের কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন আমাদের প্রতিনিধিরা। জেলা সিভিল সার্জনরা এ বিষয়ে জানিয়েছেন বিস্তারিত।