বঙ্গবন্ধুর নামে পুরস্কার ঘোষণা

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের  ৯ এপ্রিলের ঘটনা।)

১৯৭৩ সালের এইদিনে বঙ্গবন্ধুর নামে নতুন একটি পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। দেশ পুনর্গঠনে বারবার কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার কথা বলে আসছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অবশেষে এইদিন কৃষির সার্বিক উন্নয়নের জন্য বার্ষিক জাতীয় পুরস্কার প্রদানের উদ্দেশ্যে একটি তহবিল গঠন করে অধ্যাদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি। তাতে বলা হয়, পুরস্কারের নাম হবে বঙ্গবন্ধু পুরস্কার। এইদিনে বাংলাদেশ নবনিযুক্ত সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাৎ করেন।

রাষ্ট্রপতি শপথ ১০ এপ্রিল

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৭৩ সালের ১০ এপ্রিল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আবু সায়েম বঙ্গভবনে দরবার হলে শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন বলে পত্রিকায় জানানো হয়। শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ, কূটনৈতিক মিশনের সদস্যবৃন্দ ও জাতীয় সংসদ সদস্যবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।

এদিকে সংসদ সদস্যদের বেতন একটা হাজার টাকা নির্ধারণ করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী নতুন অধ্যাদেশ জারি করেন।

নতুন বেতন স্কেল

অবশেষে জাতীয় বেতন কাঠামো নির্ধারণ করতে সক্ষম হয় জাতীয় বেতন কমিশন। সম্ভবত মে’র শেষ দিকে এটি ঘোষণা করা হতে পারে। প্রস্তাবিত বেতন স্কেল সরকারি, আধা-সরকারি ও সকল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। বেসরকারি সংস্থায় যতদূর সম্ভব এটি প্রয়োগ করার দিকে সরকার নজর রাখবে।

অনেকবার রদবদল করার পর প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোর ১০টি স্কেল রাখা হয়েছে। সর্বনিম্ন স্কেলের বেসিক বেতন হবে ১২০ টাকা। সর্বোচ্চ ২২০০ টাকা। অর্থাৎ সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের ফারাক হবে অন্তত দুই হাজার টাকা।

চাপের মুখে স্বীকৃতি নয়

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলি ভুট্টো বলেন, কোনও চাপের মুখে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করবেন না তিনি। অভিযোগ করেন যে, উপমহাদেশে পরিস্থিতি উন্নয়নে ভারত ‘প্রতিবন্ধকতা’ সৃষ্টি করছে। মার্কিন সাময়িকী ফরেন অ্যাফেয়ার্স-এর এক প্রবন্ধে প্রেসিডেন্ট বলেন, পাকিস্তানের যুদ্ধবন্দিদের আটকে রাখা কিছুতেই উপমহাদেশে পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক করার অনুকূল নয়। কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর মতামত রেডিও পাকিস্তান থেকেও প্রচার করা হয়। প্রেসিডেন্ট বলেন, উপমহাদেশে স্থায়ীভাবে শান্তি স্থাপনে অগ্রগতির জন্য ভারতকে সক্রিয়ভাবে সমস্যার সমাধানের মনোভাব গ্রহণ করতে হবে।

আরেকটি রৌপ্য নৌকা

ঢাকা বনস্পতি ঘি কারখানার কর্মচারীরা গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রুপার তৈরি নৌকা প্রতীক এবং নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত বিভিন্ন দ্রব্য উপহার দেয়। এর আগেও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন বঙ্গবন্ধুকে রূপার নৌকা উপহার দিয়েছে।

ছাত্রদের আত্মসমালোচনা করার আহ্বান

ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরী ছাত্রদের নিজেদেরকে আত্মশুদ্ধি ও আত্মসমালোচনা করার আহ্বান জানান। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ আয়োজিত নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশকে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করার জন্য নবজাত বাংলাদেশ ছাত্রদের নিকট থেকে অনেক কিছু আশা করে। মিজানুর রহমান ছাত্রদের পড়াশোনায় আত্মনিয়োগ করার এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে যথার্থ লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

পাবনায় ফসল নষ্ট

চারদিকে যখন খাদ্যের ঘাটতি, তখন পাবনায় জমিতে পানির অভাবে নষ্ট হচ্ছিল ফসল। পাবনা জেলার চাটমোহর থানার দক্ষিণাঞ্চলে নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে তিন হাজার একর জমিতে ইরি ও বোরো ধান নষ্ট হতে শুরু করে। ধানের জমিতে পানি সরবরাহের একমাত্র উৎস শুকিয়ে যাওয়ায় পাম্প দিয়ে পানি তোলা সম্ভব হয়নি।

চাটমোহরের বেশ কিছু এলাকার নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। ফলে নদীর দুই তীরে উৎপাদন কার্যকর করা যাচ্ছে না। পানির অভাব ছাড়াও পোকার উপদ্রব বেড়ে অন্যান্য ফসল নষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় চাষিরা মনে করেন অবিলম্বে গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচের ব্যবস্থা করলে এই অঞ্চলের মাঠের ফসল রক্ষা পেতে পারে।