সবকিছু খুলে দিয়ে এ কেমন ‘লকডাউন’?

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭৪ জন। যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। এক মাসেই মারা গেছেন এক হাজার ৪৫ জন। ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমণ ছয় হাজার ৮৫৪। আজ (৮ এপ্রিল) নতুন শনাক্তের সংখ্যা কম হলেও আগের দিন শনাক্ত হন সাত হাজার ৬২৬ জন। তার আগের দিন মারা যান ৬৬ জন।

‘ঢাকা বারুদের ওপর দাঁড়িয়ে আছে’ জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন এ কথা। অর্থমন্ত্রী বললেন, ‘জনগণের সিকিউরিটির কথা মাথায় রেখে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে’। এমন মন্তব্যের পরও শুক্রবার থেকে সকাল নয়টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত দোকান ও বিপণিবিতান খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে যদিও, তথাপি চালু থাকবে গণপরিবহনও।

এসব সিদ্ধান্তকে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছেন কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, একদিনে লকডাউন, আরেকদিকে সবই চলছে। রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম, দোকান-মার্কেট সব খোলা, পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। সব কিছু খুলে দিয়ে এ কেমন লকডাউন।

করোনা বিষয়ক জাতীয় কমিটি সরকারকে সর্বাত্মক লকডাউনে কথা জানিয়েছিল। ডা. ইকবাল বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বাইরে অন্য মন্ত্রণালয়গুলো লকডাউনের ব্যাপারে আন্তরিক নয়। এজন্যই এই অবস্থা।

কিন্তু এ সিদ্ধান্ত বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলবে বলে জানান অধ্যাপক ইকবাল।

গণপরিবহন, অফিস ও শপিংমল খোলা রাখাকে ‘বাংলাদেশি লকডাউন’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই লকডাউনের মানেটা বুঝতে পারছি না।

এরকম চলতে থাকলে অনেক মানুষ মারা যাবে। গতকালের চেয়ে সংক্রমণের হার কম হলেও মৃত্যুর সংখ্যা কিন্তু বেশি।

এদিকে, লকডাউনের জন্য সরকারের প্রস্তুতি ছিল না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ।

তিনি বলেন, সরকার যে ১৮ দফার নির্দেশনা দিয়েছিল সেটাই একটু জোরদার করতে চেয়েছিল। লকডাউন দিতে গেলে অনেক প্রস্তুতি দরকার হয়। অনেক বিভাগের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সেসব কিছুই হয়নি।

‘একইসঙ্গে সব গণপরিবহন বন্ধ আবার অফিস খোলা। গণপরিবহন বন্ধ রাখলে কী সমস্যা হবে সেটা হিসেবে আনা হয়নি। বিকল্প না রাখায় গণপরিবহন চালু করতে হলো। নিম্নবিত্তদের জীবিকার কথাও বিবেচনায় আসেনি।’ জানালেন ডা. বে-নজির।

আগের বছরের সব রেকর্ড ভেঙে গত ২৯ মার্চ করোনা শনাক্ত হন পাঁচ হাজার ১৮১ জন। সেই রেকর্ড ভেঙে আবার ৩১ মার্চ শনাক্ত হন পাঁচ হাজার ৩৮৫ জন। ১ এপ্রিল শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ছয় হাজার ৪৬৯ জনে। ২ এপ্রিল আবারও রেকর্ড ভেঙে শনাক্ত দাঁড়ায় ছয় হাজার ৮৩০ জন। ৪ এপ্রিল একদিনে শনাক্ত দাঁড়ায় সাত হাজার ৮৭ জন।

দেশে এখন পর্যন্ত শনাক্ত ৬ লাখ ৬৬ হাজার ১৩২ এবং মারা গেছেন ৯ হাজার ৫২১ জন।