মামলা হওয়া যুদ্ধবন্দিদের ফেরত পাঠাবে ভারত

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১২ এপ্রিলের ঘটনা।)

 

ভারত বাংলাদেশের কাছে সেইসব পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য পাঠাবে যাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সর্দার শরণ সিং পুনরায় তাঁর এই বক্তব্য দৃঢ়তার সঙ্গে লোকসভায় জানান। যুদ্ধাপরাধীদের প্রস্তাবিত বিচার সম্পর্কে লোকসভায় উত্থাপিত কয়েকটি প্রশ্নের জবাবে শরণ সিং বলেন, যুদ্ধাপরাধের তদন্তে ভারত জড়িত নয়। কেননা, এর এখতিয়ার পুরোপুরি বাংলাদেশের। বাংলাদেশ সরকার একাই তদন্ত চালাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ দূত সম্প্রতি ঢাকা সফরকালে এসব তদন্ত ও তার ফলাফল সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করেছিলেন কিনা জিজ্ঞেস করা হলে শরণ সিং নেতিবাচক জবাব দেন এবং তিনি বলেন বিষয়টি বাংলাদেশের নিজেদের। এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে জিজ্ঞেস করা ভারত সঙ্গত মনে করে না।

তিনি বলেন, ভারত এখনও বিচারের জন্য বাংলাদেশের কাছ থেকে বন্দিদের কোনও তালিকা পায়নি। ইসলামি দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে যুদ্ধবন্দিদের সম্পর্কে গৃহীত একটি প্রস্তাবের প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন ভারত এই প্রশ্নে কোনও চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না।

বৈঠক হবে না

ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে ছোটখাটো বৈঠকের আয়োজন করা হচ্ছে বলে প্রকাশিত একটি খবরের সত্যতা সর্দার শরণ সিং অস্বীকার করেন এবং তিনি বলেন এ মুহূর্তে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নেই।

তিনি আরও বলেন, সরকারি পর্যায়ে একটি বৈঠক করতে চাই। পাকিস্তান আর বাংলাদেশের দিক থেকে তার বক্তব্য হচ্ছে কেবল সার্বভৌম সমতার ভিত্তিতে অর্থাৎ পাকিস্তান কর্তৃক স্বীকৃতি প্রদানের ভিত্তিতেই বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হতে পারে। পাকিস্তান অচিরেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে এমন কোনও আভাস পাওয়া যায়নি বলে তিনি লোকসভায় জানান।

এদিকে পিটিআইয়ের খবরে প্রকাশ, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সদ্যগৃহীত পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে উল্লেখ করাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে আখ্যায়িত করেন। উপমহাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ১৯৭৩ সালের এইদিনে  ভারতীয় গণসংযোগ শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষানবিশদের এক সভায় তিনি উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা শুরু

একটি ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা শুরু করেন পাটমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলায় সরকারের কার্যক্রমের প্রশংসা করেন তিনি। আতাউর রহমান খান ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর কতিপয় সংশোধনী উত্থাপন করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থতার অভিযোগ করে সরকারের সমালোচনা করেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা অসমাপ্ত রেখে অধিবেশন মুলতবি রাখা হয়।

ড. কামাল দিল্লি যান ১৩ এপ্রিল

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সর্দার শরণ সিংয়ের আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে নয়াদিল্লি যাবেন। এই সফরকালে নয়াদিল্লিতে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক, পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, উপমহাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।

৩ লাখ বেকার চাকরি পেয়েছে

মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বলেন বাংলাদেশে তিন লক্ষ বেকারকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও বেকার সমস্যার সমাধান হয়নি। মন্ত্রী আরও বলেন, জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ হিসেবে সমাজের শতকরা ৫১ ভাগ একেবারে ভূমিহীন, সর্বস্বান্ত ও ছিন্নমূল। এদের কারও হয়তো ঠিকানা দেওয়ার মতো ভিটে রয়েছে, কিন্তু ফসল ফলানোর ভূমি নেই।