‘মিয়ানমারের গণতন্ত্র ফিরে আসা নিয়ে সন্দিহান বাংলাদেশ’

ফেব্রুয়ারির শুরুতে মিয়ানমারে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর থেকেই চলমান অস্থিরতায় নজর রাখছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকার মনে করে মিয়ানমারের অস্থিতিশীল পরিবেশ বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। আপাতদৃষ্টে মিয়ানমারের পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে সেখানে দ্রুত গণতন্ত্র ফিরে আসার সম্ভাবনা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান।

বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘কোনওভাবেই দেশটির অস্থিতিশীলতা আমাদের কাম্য নয়। আমরা চাই সব পক্ষ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে মতবিরোধ দূর করুক।’

তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। আরাকান আর্মিসহ জাতিগত বিভিন্ন দল সরকারবিরোধী আন্দোলন করছে। এখন ধৈর্য্য ধরে নতুন পরিস্থিতি দেখে যেতে হব। পর্যালোচনা করতে হবে।’

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

২০১৭ সালে মিয়ানমার সামরিক জান্তার নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল। এখন প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আছে। এদের প্রত্যাবাসনে রাখাইন রাজ্যকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘মিয়ানমার নিয়ে আমাদের প্রধান চিন্তা হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে সবসময় প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলতে রাজি। কিন্তু এই মুহূর্তে তা কতটা ফলপ্রসূ হবে সেটা চিন্তার বিষয়।’

এই মুহূর্তে রোহিঙ্গা নিয়ে আলোচনার কোনও ফল আসবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি চাই না। আবার অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষা করাও কঠিন। এজন্য বাংলাদেশ শক্ত বা সরাসরি কোনও অবস্থান নেয়নি।’

বাংলাদেশের অবস্থান

জেনেভাতে মানবাধিকার কাউন্সিলে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শীর্ষক রেজুলেশনে বাংলাদেশ একজন কো-স্পনসর এবং মিয়ানমারের বিরোধিতার পরও এটি ২৩ মার্চ গৃহীত হয়। আবার ২৭ মার্চ মিয়ানমার আর্মড ফোর্সেস দিবসে পশ্চিমা বিশ্বের সব দেশের বয়কট করলেও মাত্র আটটি দেশের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে বাংলাদেশও ছিল। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে এবং নিয়মিত যে অনুষ্ঠানগুলো হয় সেগুলোতে আমরা অংশগ্রহণ করছি।’

প্রসঙ্গত গত ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর থেকেই চলছে হত্যাকাণ্ড। গত দুই মাসে সাতশ’র বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে সামরিক বাহিনীর গুলিতে। গত শুক্রবার (৯ এপ্রিল) সামরিক বাহিনীর গুলিতে নিহত হন ৮২ বিক্ষোভকারী।