পিন্ডির হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড়

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২৪ এপ্রিলের ঘটনা।)

রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৭৩ সালের এই দিনে বলেন, পাকিস্তান অন্যায়ভাবে আটক নিরাপরাধ বাঙালিদের বিচার যদি করে, তাহলে তা হবে বিচারের প্রহসন মাত্র। এ দিন বঙ্গভবনে ফরাসি চিন্তাবিদ আঁদ্রে মালরোর সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি এই মন্তব্য করেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আটক বাঙালিদের বিচারের জন্য পাকিস্তান যে হুমকি দিয়েছে, তা থেকে একথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, আটক বাঙালিরা সম্পূর্ণ নিরাপরাধ।’

রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে পাকিস্তানে অন্যায়ভাবে আটক নিরাপরাধ বাঙালিদের কোনও অবস্থাতেই এক করে দেখা যেতে পারে না।’ পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের মতো আটক বাঙালিদের মর্যাদা পাওয়া উচিত বলে প্রেসিডেন্ট ভুট্টো দায়িত্বহীন উক্তি করেছেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী তার বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ‘এ উক্তি বর্বরোচিত এবং এর বিরুদ্ধে বিশ্ব সোচ্চার হবে।’ বাংলাদেশের প্রতি অব্যাহত সমর্থন ও বাংলাদেশ সফরে আসার জন্য রাষ্ট্রপতি মালরোকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি হওয়া উচিত, বলেছেন আঁদ্রে মালরোসাংবাদিক সম্মেলনে মালরো

বাঙালিদের বিচারের চেষ্টা করা হবে পাকিস্তানের চূড়ান্ত নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক। এইদিন ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে বঙ্গভবনে চিন্তাবিদ ও উপন্যাসিক আঁদ্রে মালরো এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন। পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধীদের  শাস্তি না দিয়ে ছাড়া উচিত হবে না— এই বক্তব্যের সঙ্গে তিনি একমত পোষণ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা যে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, তা উল্লেখ করে  তিনি বলেন, ‘ইউরোপে আমরা যা ভেবেছিলাম, এ ধ্বংসযজ্ঞ তার থেকেও য়াবহ। পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা আরও বিরাট।’ তিনি বলেন, ‘দেশের পুনর্গঠনের জন্য আপনাদের অবশ্যই কঠিন সংগ্রাম চালাতে হবে।’

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মতো ত্রাণ বিতরণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে এদিন সকালে ঢাকা শহরের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন আহত ব্যক্তিদের মধ্যে কাপড়-চোপড় ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ ও ঢাকা নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রেডক্রস-বাংলাদেশের প্রধান গাজী গোলাম মোস্তফা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল সফর করেন এবং আহত ব্যক্তিদের মধ্যে শাড়ি, লুঙ্গি,  শার্ট ও অন্যান্য কাপড়চোপড়সহ শিশু খাদ্য বিতরণ করেন।

টর্নেডোতে আহত ২৭৮ জন ব্যক্তি এই দুইটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তোফায়েল আহমেদ ও গাজী গোলাম মোস্তফা হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে আহত ব্যক্তিদের খোঁজখবর নেন। সরকার মানিকগঞ্জ মহকুমা ও ফরিদপুর জেলার দুর্গত মানুষকে পুনর্বাসনের জন্য ৫৫০ বান্ডিল ঢেউ টিন মঞ্জুর করে। সরকার সিলেট জেলার টর্নেডো বিধ্বস্ত মানুষের পুনর্বাসন কাজের জন্য আরও তিন লাখ টাকা মঞ্জুর করে। এর আগে সরকার এ জেলায় দুর্গতদের জন্য তিন লাখ টাকা সাহায্য দিয়েছিল।

১৯৭৩ সালের ২৫ এপ্রিলের দ্য বাংলাদেশ অবজারভারজিল্লুরের শয্যাপাশে বঙ্গবন্ধু

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দিন বিকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমানকে দেখতে জান। বিপিআই-এর খবরে বলা হয়,  প্রধানমন্ত্রী জিল্লুর রহমানের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন এবং সেখানে কিছু সময় অবস্থান করেন। অসুস্থ আওয়ামী লীগ নেতাকে দেখতে যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ রেডক্রসের প্রধান গাজী গোলাম মোস্তফা, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক  আব্দুর রাজ্জাক, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদসহ আরও অনেকে।