হিথের কাছে বঙ্গবন্ধুর পত্র

বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২ মে’র ঘটনা।)

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ দূত এম আর সিদ্দিকী ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি তাকে বঙ্গবন্ধুর একটি চিঠি দেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ৪০ মিনিট ধরে তাদের বৈঠক হয়।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে উপমহাদেশ সম্পর্কে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করেন সিদ্দিকী। হিথ বঙ্গবন্ধুকে তার শুভেচ্ছা জানাতে সিদ্দিকীকে অনুরোধ করেন। এর আগে তিনি পররাষ্ট্র দফতরের মন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় ঘণ্টাখানেক আলোচনা করেন। কমনওয়েলথ ও পররাষ্ট্র অফিসের পদস্থ কর্মচারী এবং বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার ওই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

শামসুল হকের ব্যাংকক যাত্রা

বাসস পরিবেশিত অপর এক খবরে বলা হয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ দূত শামসুল হক এইদিন ব্যাংককের উদ্দেশ্যে কলকাতা যাত্রা করেন। চার সপ্তাহ ধরে তার এশিয়ার রাজধানীগুলো সফর করার কথা। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, উত্তর ভিয়েতনাম ও জাপান সফর করবেন তিনি।

শামসুল হক বিমানবন্দরের বাসস প্রতিনিধিকে জানান, তিনি দেশগুলোর সরকারকে ভারত-বাংলাদেশ যুক্ত ঘটনায় বাংলাদেশের নীতি ও পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে অবহিত করবেন।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ভারতীয় শিল্পী দল

ভারতের একদল প্রখ্যাত শিল্পী এদিন বিকেলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন পঙ্কজ মল্লিক, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়, পূরবী মুখোপাধ্যায়, অরুণ দত্ত ও অরুণলেখা দত্ত। পঙ্কজ মল্লিক তাঁর নিজের কণ্ঠে গাওয়া রবীন্দ্র সংগীতের দুটো রেকর্ড বঙ্গবন্ধুকে উপহার দেন। এনার খবরে বলা হয় চারদিনের সফর শেষে ভারতীয় শিল্পী দল ৪ মে ভারত ফিরে যান।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সংবাদপত্রের সম্পাদক

বঙ্গবন্ধু এইদিন গণভবনে সংবাদপত্র ও সংবাদসংস্থার সম্পাদকদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। এনার খবরে বলা হয়, দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সম্পাদকদের সঙ্গে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে মতবিনিময় করেন। তথ্যমন্ত্রী আব্দুল আজিজ এবং প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সম্পর্কে ওয়ার্ল্ড হেইম

জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল ওয়ার্ল্ড হেইম এইদিন বলেন, বাংলাদেশে অনশন এড়ানোর জন্য চলতি বছরেই সেখানকার মারাত্মক খাদ্য ঘাটতি পূরণ করতে হবে। ১৯৭৩-৭৪ সালের শরৎকালীন ফসল কাটার মৌসুমের আগপর্যন্ত উৎপাদন পর্যায়ে খাদ্য মজুদের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশের তৎপরতা সম্পর্কিত এক রিপোর্টে উল্লেখ করেন, খাদ্যঘাটতি পূরণের ব্যাপারটি সরকার গভীর সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করছে।

জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ মিশনের মতে, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্য প্রতিদিন মাথাপিছু ১৫ আউন্স করে খাদ্যশস্য সরবরাহ অব্যাহত রাখতে ১৯৭৩ সালে ৫ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করতে হবে। মাসের শেষ নাগাদ সরকারের কেনা ১২ লাখ টন খাদ্যশস্য এবছরেই এসে পৌঁছানোর কথা। রিপোর্ট মোতাবেক ১৯৭৩ সালের জানুয়ারির শেষ নাগাদ শহরের সকল সূত্র থেকে বাংলাদেশের জন্য প্রতিশ্রুত সাহায্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার।

অনেকেই মূল্য তালিকা টাঙায়নি

তিন ব্র্যান্ডের শিশুখাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য অর্থাৎ সাবান, ব্যাটারি ইত্যাদির মূল্য ধার্য করে দেওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ জায়গায় সেই দামে বিক্রি হচ্ছে না বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড কমার্স ডিরেক্টর প্রায় ৩০টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়। এর মধ্যে রয়েছে আমদানিকৃত শিশুখাদ্যসহ বেশ কয়েকটি পণ্য। কোহিনুর কেমিক্যাল ও হেনা ক্যামিকেলস-এ উৎপাদিত পণ্যের দামও বেঁধে দেওয়া হয়। অনেকেরই অভিযোগ নির্ধারিত দামে কোনও পণ্য কেনা যাচ্ছে না।