বিনামূল্যে জমি বণ্টন শুরু

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৫ মের  ঘটনা।)

বাংলাদেশ সরকার দেশের ভূমিহীন কৃষকদের মাঝে ৫ লাখ ৩৩ হাজার একর জমি বিনামূল্যে বণ্টন শুরু করে। সরকারের ভূমি সংস্কার কর্মসূচি অনুযায়ী, ভূমিহীন কৃষকদের মাঝে পরিবার পিছু দেড় একর করে জমি জমি বণ্টন করা হয়।  যেসব পরিবার সমবায় গঠন করবে, তাদের পরিবার পিছু আরও বাড়তি জমি দেওয়ার আয়োজনের কথা জানান ভূমি সংস্কার ও ভূমি প্রশাসন দফতরের মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত। ১৯৭৩ সালের এই দিন রাতে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ ঘোষণা দেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘যেসব পরিবার সমবায় সমিতি গঠন করবে, তাদের পরিবার পিছু আড়াই একর জমির মধ্যে আধা একর জমি তাদের বাস্তুভিটার জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে এবং বাকি দুই একর জমি দিয়ে তারা সমবায় গঠন করবেন।’ তিনি বলেন, ‘বাস্তুভিটার মূল্য নির্ধারণ করা হবে বাজারের বর্তমান মূল্যের সঙ্গে মিল রেখে। বাকিটার কোনও মূল্য নেওয়া হবে না। অর্থাৎ, চাষের জন্য জমি ব্যবহার করলে সেখানে কোনও মূল্য দিতে হবে না।’

তবে কৃষকরা কোনও অবস্থাতেই এই জমি বেচতে পারবে না। সরকারের ভূমি বন্দোবস্ত নীতি অনুযায়ী, এসব জমি তাদের নামে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। মন্ত্রী উল্লেখ করেন, ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে যে ৫ লাখ ৩৩ হাজার একর জমি বিনামূল্যে বিলি করা হচ্ছে, তার মধ্যে সাড়ে ৪ লক্ষাধিক সরকারি খাস জমি এবং বাকি ৭১ হাজার একর জমি সর্বোচ্চসীমার অতিরিক্ত জমির মালিকদের স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেওয়া। মন্ত্রী বলেন, ‘সকলেই এখনও সর্বোচ্চসীমা অতিরিক্ত জমি ছেড়ে দেয়নি।’

১৯৭৩ সালের ৬ এপ্রিল প্রকাশিত বাংলাদেশ অবজারভারমজুত-বেশি দামে বিক্রি করলে ৩ বছরের কারাদণ্ড

বাংলাদেশ সরকার ৩০টি দ্রব্যকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য হিসেবে ঘোষণা করে। এসব নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি যাতে কেউ মজুত না করতে পারে, সে জন্য ‘বাংলাদেশ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নির্দেশ (১৯৭৩)’ জারি করা হয়। এই নির্দেশ মোতাবেক কোন দ্রব্য কতদিন সংরক্ষণ করা যাবে, তার তালিকা দেওয়া হয়। শিশু বা রোগীর খাদ্য বা সংশ্লিষ্ট দ্রব্য কোনও আমদানিকারক বা প্রস্তুতকারক পাওয়ার বা উৎপাদনের ৩০ দিনের বেশি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে না। কোন ডিলার কতটুকু পণ্য রাখতে পারবে বা সীমান্তবর্তী জেলার বিষয়ে কতটুকু ছাড় দেওয়া হবে তারও উল্লেখ আছে।

পাকিস্তানি ছাত্ররা বাঙালি-পাকিস্তানি বিনিময় দাবি করে

সম্প্রতি করাচিতে নিখিল পাকিস্তান পর্যায়ে ছাত্রদের একটি প্রতিনিধিত্বশীল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থিত দেশপ্রেমিক পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রায় ১২৭ জন প্রতিনিধি এই সম্মেলনে যোগদান করেন। সম্মেলনে গৃহীত এক প্রস্তাবে দাবি করা হয়— বাংলাদেশে ফিরে যেতে ইচ্ছুক বাঙালিদের বিনিময়ে বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্থানিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।

১৯৭৩ সালের ৬ এপ্রিল প্রকাশিত দৈনিক বাংলা১০ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে

প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনায় দেশের ১০ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, এই পাঁচশালা পরিকল্পনায় ১০ হাজার গ্রামে  তিনটি করে মোট ৩০ হাজার পাম্প স্থাপনের বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে এবং এই বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য মূলত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, ওই বছরের জুলাই থেকে দেশে প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনার কাজ শুরু হওয়ার কথা। এর মেয়াদ থাকবে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত। এই পরিকল্পনায় কৃষি উৎপাদনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এই লক্ষ্য সামনে রেখে নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।