কর্মস্থলেই থাকতে হবে, এক জেলার গাড়ি অন্য জেলায় যাবে না

করোনা সংক্রমণের দিক থেকে বাংলাদেশ যথেষ্ট ঝুঁকির মধ্যে আছে। এ কারণে আগামী দিনগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার অবস্থান নিয়েছে সরকার। এ কারণে লকডাউন তুলে না নিয়ে তা বাড়ানোর আদেশ জারি করা হয়েছে। চলমান লকডাউন বা আরোপিত বিধিনিষেধ আগামী ১৬ মে রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

তবে এই সময়ে চলমান লকডাউনের কৌশল পরিবর্তন করেছে সরকার। তিন দিনের ঈদের ছুটির দুই দিন শুক্রবার ও শনিবার পড়লেও বাড়ানো হয়নি এ ছুটি। শুধু তাই নয়, সরকারি-বেসরকারি কলকারখানা, কোনও প্রতিষ্ঠানও সরকার নির্ধারিত তিন দিনের ছুটি বাড়িয়ে ভোগ করতে পারবে না।

এখানেই শেষ নয়, ঈদের ছুটি তিন দিন নিজ নিজ কর্মস্থলের বাইরে না যাওয়ার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। বলা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটিকালীন তিনদিন স্ব স্ব কর্মস্থলে থাকা আবশ্যিক। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি অফিস এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটিতে বাধ্যতামূলক কর্মস্থলে থাকতে হবে।

পাশাপাশি বিক্ষোভ, দাবি-দাওয়া নিয়ন্ত্রণে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। তবে আন্তজেলা বাস সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, এক জেলার গাড়ি অন্য জেলায় যেতে পারবে না। আর সীমানা জটিলতায় ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মাস্ক না পরলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টে সাজাও দেওয়া যাবে। মার্কেট বা শপিং মল স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত আদেশ না মানলে তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দেওয়া হবে। কোনও ছাড় নয়। এসব কঠোর বিধিনিষেধ আগের আদেশে ছিল না।

ওয়ার্ক স্টেশনে পাওয়া না গেলে ব্যবস্থা

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রিপরিষদের একজন অতিরিক্ত সচিব জানিয়েছেন, ঈদের ছুটি বাড়ালেই মানুষ এদিক সেদিক মুভমেন্ট করবে। এতে সংক্রমিত হবে করোনা। এ কারণেই এই বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নিজ নিজ দফতরের প্রধানদের মৌখিকভাবে বলা হয়েছে, অধস্তন কর্মকর্তা কর্মচারীরা স্ব-স্ব কর্মস্থলে আছেন কিনা তা মনিটর করতে। কাউকে তাৎক্ষণিক ওয়ার্ক স্টেশনে পাওয়া না গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও বলা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, চলমান লকডাউন শেষ হবে বুধবার ৫ মে রাত ১২টায়। ৫ মে লকডাউনের মেয়াদ শেষে ঈদের আগে কর্মদিবস পাওয়া যাবে তিনটি। এগুলো হচ্ছে- ৬ মে (বৃহস্পতিবার), ৯ মে (রবিবার) ও ১১ মে (মঙ্গলবার)। এরমধ্যে ৭ ও ৮ মে হচ্ছে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার। এরপর ১০ মে সোমবার শবে কদরের ছুটি। আগামী ১২ মে বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। রমজান মাস যদি ২৯ দিনে শেষ হয় তাহলে ঈদুল ফিতর হবে ১৩ মে। এক্ষেত্রে ১৩ ও ১৪ মে-ও (বৃহস্পতি ও শুক্রবার) ঈদের ছুটি থাকবে। তবে রমজান মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হলে ঈদের ছুটি আরও একদিন বাড়বে, সেক্ষেত্রে ১৫ মে শনিবারও ছুটি থাকবে।

পরিস্থিতির দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ 

ভারতের নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বিধায় সে দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের আকাশ, স্থল ও নৌ সব সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে সংক্রমণের হার কিছুটা কমতে শুরু করেছে। সংক্রমণের হার কমার এই শুরুটা ধরে রাখতে না পারলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। তখন আর কোনও লকডাউনে কাজ হবে না বলে মনে করেন সরকার সংশ্লিষ্টরা। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, ‘আমরা এখনও ঝুঁকিতে রয়েছি। কবে নাগাদ ঝুঁকিমুক্ত হবো তা নিশ্চিত নয়। এমন পরিস্থিতিতে সবকিছু স্বাভাবিক করে দেওয়া কতখানি যুক্তিযুক্ত হবে তা নিয় চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। কোনও কিছুই চূড়ান্ত করা হয়নি। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে। ভারতের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের করণীয় ঠিক করতে হবে। মানুষের সংক্রমণ ও মৃত্যু তো ঠেকাতে হবে।’

আরও পড়ুন-

যা আছে প্রজ্ঞাপনে