দুর্যোগের কবলে দেশ, বঙ্গবন্ধুর জরুরি নির্দেশ

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১০ মের  ঘটনা।)

১৯৭৩ সালের মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশ ভয়াবহ কালবৈশাখী ও ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে। এর পরপরই  এপ্রিলের শেষ থেকে বন্যা শুরু হয়। মে মাসে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। এ সময় পত্রিকাজুড়ে কেবল ঘরহারা মানুষের হাহাকারের খবর প্রকাশ হয়। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের কাছে যেন ত্রাণ পৌঁছায়, সে বিষয়টি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বারবারই নিশ্চিত করতে বলেছেন।

ভয়াবহ বন্যার কবলে দেশ

কালবৈশাখীর ভয়াল থাবা শুকাতে না শুকাতেই মৌসুমি বন্যা এসে পড়ায় পূর্বাঞ্চলের তিনটি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা ইতোমধ্যে বন্যার পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। বন্দরনগরীর সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ থেমে গেছে তখন। যুদ্ধবিধ্বস্ত সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এরপরেও খবর আসছে— বন্যার পানি ধেয়ে আসার। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, পরিস্থিতি

বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর জরুরি নির্দেশ

আরও খারাপ হবে। প্রবল বৃষ্টিপাত ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় অঞ্চল থেকে ব্যাপক ঢল নেমে আসার ফলে নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। সংবাদ সংস্থার এক খবরে বলা হয়, সরকার ইতোমধ্যে বন্যা দুর্গত এলাকার জন্য ছয় লাখ ৮০ হাজার টাকা  সাহায্য করেছে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সাহায্য করতে নির্দেশ দেন।

বঙ্গবন্ধুর জরুরি নির্দেশ

দেশে বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণকাজ শুরু করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহায্য সংস্থাগুলোকে জরুরি নির্দেশ দেন। জনগণের দুর্দশা লাঘবে কোনও প্রচেষ্টা যেন বাদ দেওয়া না হয়, বঙ্গবন্ধু তার নিশ্চয়তা বিধান করতে বলেন। বন্যাকবলিত এলাকায় সরেজমিনে তদন্ত করে পরিস্থিতি ব্যক্তিগতভাবে পর্যালোচনা করার জন্য বন্যানিয়ন্ত্রণ দফতরের মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদকে জরুরি নির্দেশ দেন। জরুরি সাহায্য হিসেবে সর্বমোট ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা মঞ্জুর করা হয়। এর মধ্যে কুমিল্লা ও সিলেটে আড়াই লাখ এবং নোয়াখালী জেলার জন্য তিন লাখ টাকা দেওয়া হয়। এ দিনও পত্রিকাগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান চেয়ে বিশেষ সংবাদ প্রকাশ করা হয়।

১৯৭৩ সালের ১১ মে প্রকাশিত পত্রিকার শিরোনাম

জমির খাজনা সম্পর্কে বক্তব্য

সরকারের রাজস্ব-খাজনা ঠিকমতো আদায় হচ্ছে না বলে কোনও কোনও পত্রিকায় যে সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে এক সরকারি প্রেসনোটে বলা হয়— সরকার কেবল কৃষিজমির সব বকেয়া খাজনা ও আনুষঙ্গিক ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত মওকুফ করে দিয়েছে। প্রেসনোটে উল্লেখ করা হয়, যে সব পরিবারের  কৃষি জমি ২৫ বিঘার বেশি না, তাদেরকে ১৯৭৯ সাল থেকে খাজনা দিতে হবে না। তবে  তাদেরকে সব জমির জন্য উন্নয়ন, অতিরিক্ত উন্নয়ন ও রিলিফ ট্যাক্স অবশ্যই দিতে হবে বলে জানানো হয়।

বঙ্গবন্ধুকে চিকিৎসা শাস্ত্রের বই উপহার

স্নাতকোত্তর চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের এপিডিমিওলজি বিভাগের অধ্যাপক একেএম কফিলউদ্দিন এপিডিমিওলজি নিয়ে একটি বই রচনা করেন। বাংলাদেশ চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই বিষয়ে কফিলউদ্দিনের রচিত বইটিই প্রথম। তিনি এদিন গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে বইয়ের কপি তুলে দেন।

বাংলাদেশ অবজারভার , ১১ মে ১৯৭৩দালালির অপরাধে শাস্তি

যশোরের সেশন জজ ও এক নম্বর বিশেষ আদালতের বিচারক দ্বিজেন্দ্রনাথ চৌধুরী দালাল আইনে অভিযুক্ত এক পুলিশ কনস্টেবলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। এদিকে কুমিল্লা থেকে বিপিআই পরিবেশিত খবরে বলা হয়, বিশেষ আদালতে সম্প্রতি স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় দখলদার বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করার অপরাধে ৬ জন রাজাকার ও  শান্তি কমিটির দুই জন সদস্যকে ৮ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে শান্তি কমিটির সদস্য সিরাজুল হক ও নুরুল ইসলাম রয়েছে।