বিধিনিষেধ শুধু প্রজ্ঞাপনে

সরকার করোনা মহামারি প্রতিরোধে জনসাধারণের চলাচল সীমিত করতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিধিনিষেধ বা শর্তারোপ করেছে। এর মধ্যে অনেক শর্ত রয়েছে যা কেউই মেনে চলে না। তারপরও যখনই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে সেসব প্রজ্ঞাপনে ওইসব শর্ত নতুন করে উল্লেখ করা হয়। বারবার উল্লেখ করা হয়। কিন্তু সব সময়ই এসব শর্ত শুধু কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ থাকে। ফলে অনেকেই প্রশ্ন করছেন, যেসব শর্ত কেউ মানে না যেসব বিধিনিষেধ অনুসরণ করে মানুষ চলাচল করে না, সেসব শর্ত বা বিধিনিষেধ কেন দেওয়া হয়?

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত ১৪ এপ্রিল বুধবার থেকে ৭ দিনের সার্বিক কার্যাবলী ও চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ওই প্রজ্ঞাপনে ১৩ দফা নির্দেশনা জারি করে। উপ-সচিব মো. রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে জারি করা নির্দেশনা ১৪ এপ্রিল ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত মেনে চলার কথা বলা হয়েছিল।

১২ এপ্রিলে জারি করা কঠোর লকডাউনের ১৩ দফা সুপারিশে বলা হয়েছে, সব সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এ আদেশ শতভাগ কার্যকর। তবে সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ-নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন— এমন শর্ত অনেকটাই অকার্যকর। কারণ অনেকেই রাজধানীর কর্মস্থল ছেড়ে বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন পরিবার পরিজন নিয়ে।

সর্বশেষ ৫ মে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে— শপিং মল রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। এই শর্ত শুধুই কাগজে-কলমে। রাত ৮টায় রাজধানীসহ দেশের কোনও অঞ্চলের দোকানপাট শপিং মল বন্ধ হয় না। এমনও এলাকা রয়েছে যেখানে রাত ১২টা বা ১টা পর্যন্ত দোকান শপিং মল খোলা রাখা হচ্ছে। ঈদের আগের দিন চাঁদ রাতে সারারাত মার্কেট শপিং মল খোলা রাখার পরিকল্পনা করছেন কেউ কেউ।

185357703_256249169625571_2624069162646179106_nআন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ রাখার শর্ত রয়েছে ৫ মে জারি করা প্রজ্ঞাপনে। কিন্তু এমনও সংবাদ পাওয়া গেছে, যে কৃষি শ্রমিকের পরিচয়ে বাস ভর্তি নারী-পুরুষ নিয়ে রাজধানী থেকে বিভিন্ন জেলায় গেছে এবং যাচ্ছে।

৫ মে জারি করা সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জনসমাবেশ হয়, এ ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান করা যাবে না। অথচ রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় বিয়ের অনুষ্ঠান গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হচ্ছে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের কোনও বালাই নাই।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আন্তঃজেলা বাস সার্ভিস বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবা এ আদেশের বাইরে থাকবে। এ শর্ত কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে তার প্রমাণ মেলে মাওয়া ঘাটে ফেরিতে নদী পার হতে গিয়ে। জরুর সার্ভিস ও পণ্যবাহী টাক বা কাভার্ড ভ্যান এমনকি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স উঠতে না দিয়ে একটি ফেরিতে হাজার হাজার যাত্রী উঠে নদী পার হয়েছে। নিজস্ব পরিবহনে শ্রমিকদের এনে শিল্প কারখানা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু রাখার কথা বলা হলেও শ্রমিকরা নিজ উদ্যোগে নিজ ব্যবস্থাপনায় কারখানায় আসছেন, কাজ করছেন। প্রতিশ্রুতি দিলেও এই শর্তটি শতভাগ পালন করছেন না কারখানার মালিকরা।

খাবারের দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কেবল খাদ্য বিক্রয় ও সরবরাহের জন্য খোলা রাখা যাবে বলা হলেও তা মানছেন না অনেকেই। সারাদিনই খোলা রাখা হচ্ছে খাবার হোটেল। প্যাকেটে খাবার সরবরাহ করতে হবে, চোর টেবিলে বসিয়ে খাওয়ানো যাবে না বলা হলেও প্যাকেট খাবার সরবরাহের পাশাপাশি বসিয়ে খাওয়ানোর কার্যক্রমও চলছে। 

কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের বাজারে খোলা স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করতে হবে বললেও প্রজ্ঞাপনের এই শর্ত ভাঙা হয়েছে অনেক আগেই। আগের মতোই চলছে বাজার ও কেনাকাটা।

স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুমা ও তারাবির নামাজের জামাত বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিলেও এই শর্ত শুধুই কাগজে কলমে। বলা হয়েছিল সর্বোচ্চ ২০ জন মুসল্লি নিয়ে তারাবি ও জুমার নামাজ আদায় করা যাবে। শুরু থেকেই এই শর্তটি মানা হয়নি। কোনও কোনও মসজিদে ২০০ থেকে ৫০০ মুসল্লি নিয়েও তারাবি নামাজ আদায় হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আশা করবো সচেতন নাগরিক হিসেবে সবাই করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চলবেন। স্বাস্থ্যবিধি মানবেন। সরকারকে সব ধরনের সহায়তা করবেন।