পাকিস্তান ইস্যুতে কথা বললো বাংলাদেশ

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৩ মের  ঘটনা।)

মানবিকতার জায়গা থেকে পাকিস্তানকে জবাবদিহি করতে হবে। ১৯৭৩ সালের এই দিনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘পাকিস্তান আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করেছে। সেটি তাদের জঘন্য নৃশংসতাকারীদের সমর্থন ও বিষয়টি থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে নিবদ্ধ করার প্রচেষ্টা বলে মনে হয়।’ পররাষ্ট্র দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পাকিস্তানের সর্বশেষ ‘ধোঁকা’ সম্পর্কে মন্ত্রী তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আশা প্রকাশ করেন, বিশ্ব মতামত তার নিজস্ব পথে চলবে। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা সম্পর্কে কোনও তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। উপমহাদেশের মানবিক সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ঘোষণার পর মধ্যরাতে নিরীহ বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিদের হামলা সম্পর্কে কামাল হোসেন বলেন, ‘নিরীহ বাঙালিদের বিচার করার ব্যাপারটি পাকিস্তানের পক্ষ থেকে একটি দুঃখজনক পদক্ষেপ।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের চরিত্রে খামখেয়ালিপনার দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। পাকিস্তানকে বিশ্বমানবতার কাছে জবাবদিহি করতে হবে। বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ ঘোষণা সক্রিয় ও গঠনমূলক উদ্যোগ হিসেবে সারা বিশ্ব নন্দিত করেছে। পাকিস্তান এখন উপলব্ধি করবে তাদের নেতিবাচক মনোভাব তাদের দুরভিসন্ধি উদঘাটিত করবে মাত্র।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের যুক্ত ঘোষণাকে সারা বিশ্ব প্রশংসা করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে তারা। এই উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় পাকিস্তান ভেটো দিলে সমস্যার সমাধান হবে না। বরং পাকিস্তানি ও আটক বাঙালিদের নিজ নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার কাজ আরও বিলম্বিত হবে।’

১৪ মে (১৯৭৩) প্রকাশিত দৈনিক বাংলার প্রধান শিরোনামএদিকে মানবিক সমস্যার সমাধান হবে উল্লেখ করে কানাডায় সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এম আর সিদ্দিকী বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের যুক্ত প্রস্তাব পাকিস্তান গ্রহণ করলে উপমহাদেশের মানবিক সমস্যার সমাধান হবে।’ এই দিন সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো এবং সে দেশের পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে সমর্থন লাভের জন্য লন্ডন ও ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের যুক্তি বিশ্লেষণ করেন।

পাকিস্তানি প্রস্তাবের জবাব দিয়েছে ভারত

বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ঘোষণার ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য পাকিস্তান যে প্রস্তাব দিয়েছিল, নয়াদিল্লি তার জবাব দিয়েছে। ভারত বলেছে, যেকোনও আলোচনার ভিত্তি হিসেবে বাংলাদেশ-ভারতের  যৌথ ঘোষণার সারমর্ম পাকিস্তানের নীতিগতভাবে মেনে নেওয়া উচিত। ভারতের বক্তব্য পাকিস্তানকে জানিয়ে দেওয়ার কথা লোকসভায় প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার শরণ সিং।

সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

দেশের বন্যা উপদ্রুত জেলাগুলোর বন্যা পরিস্থিতি দ্রুত উন্নতি হচ্ছে বলে খবর প্রকাশ হয়। কুমিল্লার জেলা প্রশাসকের বরাত দিয়ে বাসস জানিয়েছে, কুমিল্লা জেলার বন্যা প্লাবিত প্রত্যেকটি থানায় পানি নেমে যাচ্ছে। বাসসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কুমিল্লার ডিসি জানান, এই দিন সন্ধ্যায় পূর্ববর্তী ৪৮ ঘণ্টার পানি নামতে শুরু করেছে। দৈনিক বাংলার কুমিল্লা সংবাদদাতা জানিয়েছেন, কুমিল্লার মুরাদনগর ও বাঞ্ছারামপুরসহ দুর্গত এলাকায় সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।

দি বাংলাদেশ অবজারভার, ১৪ মে ১৯৭৩

গোমতীর বাঁধ সারানো হবে

টানা দুই দিন বৃষ্টি না হওয়ায় গোমতী নদীতে নতুন কোনও ভাঙন দেখা যায়নি। এর আগের দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেখানে পরিদর্শনে গেলে এলাকাবাসী তাকে বাঁধের বিষয়ে জানান। এই দিন (১৩ মে) কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলার সামগ্রিক বন্যা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়। এদিকে বাসস, এনা ও বিপিআই থেকে জানানো হয়, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় রিলিফ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে এবং টিকা ও ইনজেকশন দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। দুর্গত এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন নগদ অর্থ এবং খাদ্য বিতরণ করছে। কুমিল্লার ডিসি জানান, বন্যার পানি হ্রাস পাওয়ায় ধানক্ষেত দেখা যাচ্ছে। তবে ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। কুমিল্লা-ফেনী সড়কের ভাঙন মেরামত করা হয়েছে। স্বাভাবিক যান চলাচল পুনরায় শুরু হয়েছে বলেও খবরে প্রকাশ করা হয়। রেলপথ ও সড়ক পথের ওপর আশ্রয় গ্রহণকারী দুর্গতরাও ধীরে ধীরে বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন।