বঙ্গবন্ধু সরকারের অনুকম্পা

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৬ মের  ঘটনা।)

সরকার ১৯৭২ সালে দালাল আইনে অভিযুক্ত এবং সাজাপ্রাপ্ত কতিপয় ক্যাটাগরির লোককে ক্ষমা প্রদর্শনের কথা ঘোষণা করে। সরকারের এক বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয় যে ‘কতিপয় সাজাপ্রাপ্ত বা অভিযুক্ত বা কতিপয় অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের বেলায় এই ক্ষমা প্রদর্শন প্রযোজ্য হবে না। যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু, অথবা যুদ্ধ শুরু করার প্রচেষ্টা, দেশদ্রোহিতা, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি অপরাধসহ অপরাধের যেকোনও একটি ক্যাটাগরিতে সাজাপ্রাপ্ত, সুনির্দিষ্টভাবে অভিযুক্ত এবং এসব অপরাধ করেছেন বলে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাদের বেলায় ক্ষমা প্রদর্শন প্রযোজ্য হবে না। ১৯৭১ সালে তথাকথিত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, দেশের ভেতরে-বাইরে দখলদার বাহিনীর পক্ষে প্রচারণা, দখলদার বাহিনীর দালালির অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত এবং এসব অপরাধ করেছে বলে অভিযোগ আছে, তারাও ক্ষমা প্রদর্শনের আওতায় পড়বেন না।’

সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকার ঘোষিত অনুকম্পা লাভে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা জেল হাজতে থাকলে, এই ঘোষণা প্রকাশের তিন সপ্তাহের মধ্যে মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির হতে হবে। অনুকম্পা পেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা বা আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ থাকলেও ঘোষণা প্রকাশের তিন সপ্তাহের মধ্যে তাদের ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে। অনুকম্পা পেতে ইচ্ছুক সকলকেই সংশ্লিষ্ট মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত মুচলেকা দিতে হবে এবং বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য স্বীকারের ঘোষণা দিতে হবে।’

বাংলাদেশ অবজারভার, ১৭ মে ১৯৭৩১০ হাজার আটক বাঙালির তালিকা চূড়ান্ত

আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি পাকিস্তানে আটক ১০ সহস্রাধিক বাঙালির তালিকা ও তাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্য ছাড়পত্র চূড়ান্ত করেছে। সূত্র জানায়, এসব বাঙালির অধিকাংশই নারী, শিশু ও সহায়-সম্বলহীন ব্যক্তি। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, কিছু দিন পূর্বে পাকিস্তান-ভারত ৬ হাজার পাকিস্তানি বেসামরিক ব্যক্তির বিনিময়ে ১৫ হাজার বাঙালিকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কথা দিয়েছিল। আরও জানানো হয় যে বাকি ৫ হাজার বাঙালির তালিকা এবং তাদের বহির্গমনের জন্য প্রয়োজনীয় দলিলপত্র মাসখানেকের মধ্যেই প্রস্তুত করা হবে। যেসব বাঙালিকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করা হবে, তাদের তালিকা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাদের বহির্গমনের অনুমতিপত্র ইসলামাবাদ কর্তৃপক্ষ তাদের পাকিস্তান ত্যাগের আগে প্রদান করবে। এসব বাঙালির স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে বর্তমানে একমাত্র সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবহন। বাংলাদেশ সরকার এই পরিবহন ব্যবস্থার জন্য ব্রিটেনের কাছে সাহায্য কামনা করেছে বলে জানানো হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে, ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র বাংলাদেশে আটক পাকিস্তানি বেসামরিক ব্যক্তিদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করছিল।

দৈনিক বাংলা, ১৭ মে ১৯৭৩বঙ্গবন্ধু মওলানাকে অনুরোধ করেন

এই দিন রাতে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ন্যাপ প্রধান মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সঙ্গে দেখা করেন। ন্যাপপ্রধান একদিন আগে থেকে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনশন ধর্মঘট করছিলেন। বাসসের খবরে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু অনশন ভঙ্গের জন্য মওলানা সাহেবকে অনুরোধ করেন। বাসসের খবরে আরও বলা হয়, মওলানা সাহেবের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায় তাকে আমরণ অনশন ধর্মঘট প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন বঙ্গবন্ধু। ভাসানী তখন প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ বিবেচনা করবেন বলে কথা দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, ঢাকা নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী গোলাম মোস্তফাসহ অনেকে। ওইদিন রাতে অনশন কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে মওলানা ভাসানীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে বলে বেসরকারি মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। তারা অবিলম্বে তাকে হাসপাতালে স্থানান্তর না করে সেখানেই মেডিক্যাল অফিসার ও ব্যক্তিগত নার্স রেখে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।