আফগান প্রধানমন্ত্রীর কাছে বঙ্গবন্ধুর বাণী

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৮ মের ঘটনা।)

বাংলাদেশকে জোট-নিরপেক্ষ গোষ্ঠীর সদস্যভুক্ত করার জন্য আসন্ন জোট নিরপেক্ষ দেশগুলোর  সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সুপারিশকে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অভিনন্দন জানান। এ দিন আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুসা শফিকের কাছে পাঠানো এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জোট নিরপেক্ষ গোষ্ঠীতে ন্যায়সঙ্গত ভূমিকা পালনে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন। সম্প্রতি কাবুলে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটির বৈঠক সমাপ্ত হয়। প্রস্তুতি কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশকে জোট নিরপেক্ষ গোষ্ঠীর সদস্যভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়।

বাসসের খবরে বলা হয়, আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেছেন যে, জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সদস্যদের মধ্যে বাংলাদেশ তার ন্যায়সঙ্গত ও সুযোগ্য অবস্থান পাবে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাঠানো এক বাণীতে তিনি ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি যে, বাংলাদেশকে জোট-নিরপেক্ষ গোষ্ঠীভুক্ত করার প্রথম পদক্ষেপ কাবুলে নেওয়া হয়েছে।’ আফগান প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, প্রস্তুতি কমিটির প্রস্তাব আলজিয়ার্সে আসন্ন সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হবে এবং জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সদস্যদের মধ্যে বাংলাদেশে ন্যায়সঙ্গত ও উপযুক্ত আসন লাভ করবে।’

বাংলাদেশ অবজারভার, ১৯ মে ১৯৭৩বেতন কমিশনের রিপোর্ট

জাতীয় বেতন কমিশন এই দিন বিকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে তাদের রিপোর্ট পেশ করেছে। কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুর রব মোট এক হাজার পৃষ্ঠার তিন খণ্ড রিপোর্ট বঙ্গবন্ধুর কাছে হস্তান্তর করেন। এছাড়া তখন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, বন্যা নিয়ন্ত্রণমন্ত্রী মোশতাক আহমদ, কৃষিমন্ত্রী আব্দুস সামাদ ও বেতন কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় বেতন কমিশনের রিপোর্টে শুধু সরকারি কর্মচারী ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর বেতন সম্পর্কে সুপারিশ করা হয়। পরে সাংবাদিকদের কাছে  আবদুর রব  বলেন, ‘রিপোর্টের প্রথম খণ্ডে বর্তমান বেতন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বর্তমানে বেতনের আড়াই হাজার ক্যাটাগরি রয়েছে। দ্বিতীয় খণ্ডের বেতনহারের বর্ণনা আছে এবং তৃতীয় খণ্ড বেতন সম্পর্কে জনসাধারণ এবং বিভিন্ন সংগঠন যে সুপারিশ করেছে, সেসব আছে। কমিশন দাবি করে, তারা রেকর্ড সময়ের মধ্যে অর্থাৎ ১০ মাসের কম সময়ের মধ্যে তাদের রিপোর্ট প্রণয়ন করেছে এবং এই উপমহাদেশের ইতিহাসে এটা বিরল।’ তিনি দাবি করে বলেন, ‘দেশের সামাজিক-আর্থিক কাঠামো ও সরকারের সামর্থ্য এবং মুক্তিযুদ্ধকালে দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের পটভূমিতে জনসাধারণের মৌলিক প্রয়োজনগুলোকে সামনে রেখে আমরা এ রিপোর্ট প্রণয়ন করেছি।’

লাইসেন্স হবে না

যে সব আমদানিকারক আমদানি-রফতানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দফতরের জরিপের প্রশ্নমালার উত্তর দেননি, তারা ভবিষ্যতে আমদানি লাইসেন্স পাবেন না বলে এ দিন এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে বলা হয়। এতে বলা হয়, জরিপ কাজের সুবিধার্থে সকল বাণিজ্যিক আমদানিকারককে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, আমদানি-রফতানি নিয়ন্ত্রকের কাছে তথ্য প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে। কিন্তু  এর মধ্যে মাত্র ১৫ হাজার আমদানিকারক তথ্য সরবরাহ করেছেন। ইচ্ছাকৃতভাবে বাকি ১৪ হাজার আমদানিকারক প্রশ্নমালার জবাব দেননি। যারা তথ্য প্রদান করেননি, তারা ভবিষ্যতে আমদানি লাইসেন্স পাবেন না এবং যারা জরিপ তথ্য প্রদান করেছেন, তাদের মধ্য থেকে ভুয়া আমদানিকারক উচ্ছেদ করার জন্য সরেজমিনে জরিপ কার্য চালানো হবে।

দৈনিক বাংলা, ১৯ মে ১৯৭৩ভূমিহীনদের জমি প্রদান শুরু

গবাদি পশু ও বনমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত আংশিকভাবে ৮শ’ ভূমিহীন কৃষকের মধ্যে ২ হাজার ৩৬০ একর ৫৪ শতাংশ জমি বণ্টন করেন। নোয়াখালীর ২৫ মাইল দক্ষিণে এখন ৮শ’ কৃষক তিনটি গ্রাম গড়ে তুলবেন। এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী কয়েকজন কৃষককে জমির মালিকানার দলিল প্রদান করেন। বাকিদের মধ্যে দলিল বিতরণ করবেন জেলা প্রশাসক। গ্রামবাসীদের উদ্দেশে ভাষণদানকালে মন্ত্রী উৎপাদনের লক্ষ্যে তাদের কঠোর পরিশ্রম করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে, ‘চাষিদের ওই গ্রামে বাস করতে হবে, সব জমি চাষ করতে হবে এবং চাষি সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। এ সব শর্তে তাদের জমি দেওয়া হয়েছে।’